Math

যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রাম কী? যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রাম কাকে বলে?

এখানে নিচে যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রাম কী, যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রাম কাকে বলে, যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রাম গঠন, এর শর্তাবলি, এর ব্যবহার এবং সুবিধা বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো।

যোগাশ্রয়ী শব্দের অর্থ রৈখিক (একঘাত চলক বিশিষ্ট সমীকরণ বা অসমতা) এবং প্রোগ্রাম শব্দের অর্থ কৌশল বা পরিকল্পনা; অর্থাৎ যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রাম দ্বারা কোনো কর্মসম্পাদনের বিভিন্ন উপায়ের মধ্যে হতে একটি উৎকৃষ্ট উপায় নির্ধারণ করা বোঝায়। যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রাম হলো সর্বনিম্ন পরিশ্রম বা বিনিয়োগের বিনিময়ে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মুনাফা প্রাপ্তির আকাঙ্খাজাত গবেষণায় উদ্ভাসিত গাণিতিক মডেল বা ব্যাবস্থা।

যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রাম কাকে বলে?

দুই বা ততোধিক রৈখিক সমীকরণ না রৈখিক অসমতার শর্তসমূহের সাহায্যে একটি যোগাশ্রয়ী ফাংশনের সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন মান নির্ণয় করার কৌশলকে যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রাম বলে।

যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রাম গঠন

নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করে যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রাম গঠন করা হয়ঃ-

প্রথম ধাপঃ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মূল সিদ্ধান্ত তৈরি করা এবং প্রদত্ত শর্ত বা সমস্যার সাথে সম্পর্কিত উপাত্ত হতে সিদ্ধান্ত চলক নির্বাচন করা।

দ্বিতীয় ধাপঃ সমস্যাকে এই চলকগুলির ফাংশন রূপে গাণিতিক ভাবে প্রকাশ করতে হবে এবং ফাংশনকে সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন করতে হবে এই ফাংশনকে অভীষ্ট ফাংশন বলে।

তৃতীয় ধাপঃ সীমাবদ্ধতা গুলি চিহ্নিত করে তাদেরকে সমস্যার চলকের মধ্যে রৈখিক সমীকরণ বা অসমতা আকারে প্রকাশ করা। এগুলোকে সীমাবদ্ধতার সেট বলে।

চতুর্থ ধাপঃ অঋণাত্মক উপাদানগুলিকে পৃথক করতে হবে এবং গাণিতিক ভাবে প্রকাশ করতে হবে। যেমনঃ উৎপাদিত বস্তু ঋণাত্মক হতে পারে না। সুতরাং যদি উৎপাদিত বস্তু \(x\) হয় তাহলে, \(x >= 0\)

যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রাম এর শর্তাবলী

যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রাম প্রয়োগ করার যোগ্য সমস্যার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত শর্ত গুলো অবশ্যই পুরন করতে হবে।

১। সমস্যার একটি অভীষ্ট ফাংশন যেমন মুনাফা বা উৎপাদন ব্যয়, অবশ্যই থাকতে হবে যার সর্বোচ্চ সর্বনিম্ন মান নির্ণয় করতে হবে এবং তাকে সিদ্ধান্ত চলক (যেমন x ও y) এর রৈখিক ফাংশন হিসেবে প্রকাশ যোগ্য হতে হবে।

২। উৎপাদনে অবশ্যই বিকল্প কার্যক্রম থাকতে হবে যেমন একটি দ্রব্য দুইটি মেশিনে প্রস্তুত হতে পারে। এরূপ ক্ষেত্রে সমস্যা হবে কোন মেশিনে কত একক প্রস্তুত হবে তা নির্ণয় করা

৩। যেকোনো সমস্যায় অবশ্যই সীমিত সম্পদ থাকতে হবে। যেমন, একটি উৎপাদন কারখানায় কাঁচামালের যোগান সীমিত হতে হবে।

৪। প্রতিষ্ঠানের প্রদত্ত সীমাবদ্ধতাগুলি একাধিক রৈখিক অসমতায় প্রকাশযোগ্য হবে।

৫। সিদ্ধান্ত চলকগুলি অবশ্যই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ও অঋণাত্মক হতে হবে।

যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রাম এর ব্যবহার

যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রামের ব্যবহারের সুযোগ ও ক্ষেত্র সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে সীমিত পরিসরে কেবল মাত্র কয়েকটি সহজ সমস্যায় এর প্রয়োগ আলোচনা করা হলো।

১। পুষ্টি সমস্যাঃ বর্তমানে উচ্চ দ্রব্যমূল্যের বাজেট গৃহকর্তা বা গৃহকর্ত্রী গণ সীমিত আয়ের পরিবারের সকল সদস্যদের জন্য সুষম খাবার সরবরাহের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সীমাবদ্ধ বাজেটে অর্থাৎ সর্বনিম্ন খরচে প্রয়োজনীয় পুষ্টি বা খাদ্যমান সমৃদ্ধ খাদ্য তালিকা প্রস্তুত ও তা সরবরাহ করার জন্য যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয়

২। মুনাফা সমস্যাঃ ব্যবসা-বাণিজ্য শিল্প-কারখানার মূল লক্ষ্য সর্বাধিক মুনাফা অর্জন। প্রত্যেক দ্রব্যের চাহিদা, উৎপাদন খরচ ও মুনাফা সমান নয়। তাই প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে তার ব্যবসার পণ্য গুলির মূল্য, চাহিদা ও মুনাফা বিবেচনা করে এমনভাবে উৎপাদন বা ক্রয় বা মজুদ করতে হবে যেন ব্যবসায়ে মুনাফার পরিমাণ সর্বোচ্চ হয়। যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রামের মাধ্যমে এই সমস্যার সম্পূর্ণ সঠিক সমাধান করে সর্বনিম্ন ব্যায়ে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন সম্ভব হয়

৩। পরিবহন সমস্যাঃ কোন একটি দ্রব্য বিভিন্ন কারখানা হতে পাইকারি দোকানদার বা খুচরা দোকানদার পর্যন্ত পৌঁছাতে যে খরচ হয় তাকে পরিবহন খরচ বলে। যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রামের মাধ্যমে এ পরিবহন খরচ সর্বনিম্ন করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

৪। উৎপাদন সমস্যাঃ কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানে সম্পদের সীমাবদ্ধতা, শ্রমিকের ভিন্নতা, যন্ত্রের কার্যক্ষমতা, উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা ও যোগান নিশ্চিত করা অত্যন্ত জটিল কাজ। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজেও ব্যবহার করা হয় প্রোগ্রাম।

যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রাম এর সুবিধা

যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্য সর্বনিম্ন বিনিয়োগে সর্বাধিক মুনাফা অর্জন। এর সুবিধা গুলি নিম্নরূপঃ

১। সীমিত পরিমাণ মূলধন, কাঁচামাল, জনবল ও যন্ত্রপাতি দক্ষতার সঙ্গে যথাসম্ভব কম ব্যবহার করে উৎপাদনের কাঙ্খিত পরিমাণ ও গুণগত মান নিশ্চিত করণ ও সর্বাধিক মুনাফা অর্জন।

২। ভবিষ্যৎ কালের ব্যবস্থাপকের উৎপাদনের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে

৩। অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিবন্ধকতা ও শর্ত হ্রাস পায়, যার ফলে যথাযথ ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় যেন মুনাফা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে।

৪। সকল দৃশ্যমান ও অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে ন্যুনতম ব্যয়ে তা দূর করা যায়।

৫। প্রাপ্ত সম্পদ, মূলধন ও অন্যান্য সুবিধা অসুবিধার কথা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে উন্নত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button