Chemistry

কেলাসন কাকে বলে? কেলাসনের মূলনীতি

এখানে নিচে কেলাসন কি, কেলাসন কাকে বলে, কেলাসন এর উদাহরণ এবং কেলাসনের মূলনীতি সহ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

কোনো কঠিন পদার্থের দ্রবণকে অপেক্ষাকৃত উচ্চতাপমাত্রায় সম্পৃক্ত করে ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা করলে সম্পৃক্ত দ্রবণটি অতিপৃক্ত দ্রবণে পরিণত হয়, এতে দ্রবণ হতে অতিরিক্ত দ্রব কঠিন পদার্থ আকারে নিচে জমা হয়। এভাবে পৃথক হওয়া কঠিন পদার্থের যদি নির্দিষ্ট জ্যামিতিক গঠন বা কাঠামো থাকে তাদেরকে কেলাস বলে। কেলাস তৈরির এই প্রক্রিয়াকে কেলাসন বলে । কেলাস পৃথক হওয়ার পর প্রাপ্ত দ্রবণটিকে মাতৃদ্রবণ বলে।

কেলাসন কাকে বলে

যে পদ্ধতিতে কোনো অবিশুদ্ধ যৌগকে তার কেলাসে (বিশুদ্ধতম রূপ) পরিণত করা হয় তাকে কেলাসন বলে। কঠিন পদার্থের বিশোধনের ক্ষেত্রে কেলাসন একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। একটি বিশেষ দ্রাবকে কোনো কঠিন দ্রবের দ্রাব্যতা, সাধারণত তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে বৃদ্ধি পায়।

তাই, একটি উষ্ণ সম্পৃক্ত দ্রবণকে ঠাণ্ডা করা হলে দ্রবটির দ্রাব্যতা হ্রাস পায় এবং দ্রবণ থেকে দ্রবটি কেলাসিত হতে শুরু করে। শীতলীকরণ ধীরগতিতে করা হলে সচরাচর বৃহদাকার কেলাস পাওয়া যায় এবং দ্রুত শীতলীকরণে কেলাসের আকার অপেক্ষাকৃত ছোট হয় ।

কেলাসনের মূলনীতি

অপদ্রব্য মিশ্রিত জৈব যৌগকে এমন একটি যথোপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত করা হয়, যাতে কাঙ্খিত যৌগটি নির্দিষ্ট দ্রাবকে দ্রবীভূত হয় এবং অপরাপর ভেজাল বস্তু অদ্রবীভূত থাকে। পরিস্রাবণের পর পরিশ্রুত দ্রবণকে উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করে, পরে নিম্ন তাপমাত্রায় ধীরে ধীরে শীতল করা হলে, কাঙ্খিত যৌগটি কেলাসিত হয়।

স্বল্প পরিমাণে দ্রবণীয় অপদ্রব্য সাধারণত দ্রবণে দ্রবীভূত থাকে। দ্রবণকে শীতল করার পূর্বে যে কোনো ধরনের অদ্রবণীয় অপদ্রব্য দ্রুত পরিস্রাবণের মাধ্যমে অপসারণ করতে হবে। কেলাসন প্রক্রিয়ায় সঠিক দ্রাবক নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, দ্রাবক নির্বাচনের উপরই কেলাসন প্রক্রিয়ার সফলতা নির্ভরশীল।

সাধারণত একই প্রকৃতির দ্রাবক একই প্রকৃতির দ্রবকে দ্রবীভূত করে (Like dissolves like)। অর্থাৎ, অপোলার দ্রাবক (হেক্সেন, CCl4, CHC13, টলুইন) অপোলার জাতীয় দ্রবকে দ্রবীভূত করে এবং পোলার দ্রাবক (ইথাইল অ্যাসিটেট, ইথানল, পানি) পোলার দ্রবের জন্য উপযোগী। প্রায়শই জৈব কেলাসে স্বল্প পরিমাণ অপদ্রব্যের উপস্থিতির কারণে বিবর্ণ দেখা যায়। এক্ষেত্রে দ্রবণটিকে কেলাসনের পূর্বে সামান্য পরিমাণ সক্রিয় কার্বন (activated carbon) সহযোগে উত্তপ্ত করে বর্ণহীন করা হয়।

অবশেষে প্রাপ্ত কেলাসকে সাধারণ পরিস্রাবণ পদ্ধতিতে পৃথক করা হয়। অনেক সময় কেলাসকে মাতৃ দ্রবণ থেকে পৃথক করার জন্যে বুখনার ফানেল (Buchner Funnel) ব্যবহার করে হ্রাসকৃত চাপে (পানি পাম্প) পরিস্রাবণ করা হয়। পৃথককৃত কেলাসকে সামান্য পরিমাণ শীতল দ্রাবক দিয়ে কয়েকবার ধৌত করা হয় এবং ফিল্টার কাগজে শুকানো হয়।

সবশেষে ডেসিকেটরে রেখে কেলাস শুষ্ক করা হয়। শুষ্ক কেলাসের গলনাঙ্ক নির্ণয় করে যৌগটির বিশুদ্ধতা নিরূপণ করা হয়। পরপর দু’বার কেলাসনের পর প্রাপ্ত উভয় কেলাসের গলনাঙ্ক একই হলে, কেলাস বিশুদ্ধ বলে গণ্য হয় । একই দ্রাবকে ভিন্ন ভিন্ন দ্রাব্যতাবিশিষ্ট বিভিন্ন দ্রব্যের ক্ষেত্রে এদের পৃথকীকরণে আংশিক কেলাসন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

Digital Porasona Telegram Channel

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button