Bangla

অপরিচিতা গল্পের অনুধাবন প্রশ্নের উত্তর PDF [অনুধাবনমূলক]

HSC বাংলা প্রথম পত্রের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত অপরিচিতা গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন এবং উত্তর নিচে প্রকাশ করা হলো।

অপরিচিতা গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন – উচ্চমাধ্যমিক একাদশ-দ্বাদশ শ্রেনীর বাংলা প্রথম পত্রের একটি গদ্যাংশের একটি গল্পের নাম অপরিচিতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অপরিচিতা’ ছোটগল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত মাসিক ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার ১৩২১ বঙ্গাব্দের (১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দ) কার্তিক সংখ্যায়। এটি প্রথম গ্রন্থভুক্ত হয় রবীন্দ্রগল্পের সংকলন ‘গল্পসপ্তক’-এ, পরে ‘গল্পগুচ্ছ’ তৃতীয় খণ্ডে (১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে)।

অপরিচিতা গদ্যের অনুধাবন প্রশ্নের উত্তর

‘অপরিচিতা’ বাগদত্তার প্রতি মনস্তাপে ভেঙে পড়া এক ব্যক্তিত্বহীন যুবকের প্রেমানুভূতির – গল্প তার অনুশোচনাবোধের অকপট কথামালা। এই গল্পে অপরিচিতা বিশেষণের আড়ালে রয়েছে এক বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী নারী, যে সমাজে জেঁকে বসা ঘৃণ্য যৌতুকপ্রথার বিরোধিতা করেছে।

“অপরিচিতা” উত্তম পুরুষের জবানিতে লেখা গল্প । গল্পের কথক অনুপম বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের বুদ্ধনংলগ্ন সময়ের সেই বাঙালি যুবক। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর উপাধি অর্জন করেও ব্যক্তিত্বহিত, পরিবারতন্ত্রের কাছে অসহায় পুতুলমাত্র। তাকে দেখলে আজো মনে হয়, সে যেন মায়ের কোলনংলগ্ন শিশুমাত্র।

অপরিচিতা গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত অপরিচিতা গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন বা অনুধাবনমূলক প্রশ্ন এবং এর উত্তর নিচে দেওয়া হলো-

অনুধাবন প্রশ্ন-১: অনুপমকে পণ্ডিত মশায়েরা বিদ্রুপ করতেন কেন?

উত্তর: অনুপমের সুন্দর চেহারা নিয়ে তাকে শিমুল ফুল ও মাকাল ফলের সাথে তুলনা করে পণ্ডিত মশায়েরা বিদ্রুপ করতেন। ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমকে মাকাল ফল হিসেবে অভিহিত করতেন পণ্ডিত মশায়েরা। কেননা, তার ছিল সুন্দর চেহারা কিন্তু সেই অনুপাতে তেমন কোনো গুণ ছিল না। সে কারণে পণ্ডিত মশায়েরা ছেলেবেলায় তাকে মাকাল ফলের সাথে তুলনা করে বিদ্রূপ করতেন।

অনুধাবন প্রশ্ন-২: শেষ পর্যন্ত অনুপমের বয়স পুরোপুরি হলো না কেন?

উত্তর: অনুপম একমাত্র সন্তান হওয়ায় শিশুকাল থেকেই তাকে কোলে কোলে রেখে বড়ো করা হয়েছে। অনুপম তার মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায় সে খুব আদর-যত্নে মানুষ হয়েছিল। আর মামার কারণে তার সংসারের কোনো কিছুই নিয়ে ভাবতে হতো না। সবকিছু মিলিয়ে মানসিক দিক থেকে সে অপরিপক্ক রয়ে যায় । আর এ কারণেই শেষ পর্যন্ত অনুপমের বয়স পুরোপুরি হলো না বলা হয়েছে।

অনুধাবন প্রশ্ন-৩: ‘অন্নপূর্ণার কোলে গজাননের ছোটো ভাইটি’— উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে ব্যঙ্গার্থে দেবতা কার্তিকের সঙ্গে অনুপমের তুলনা করা হয়েছে। দেবী দুর্গার দুই পুত্র— অগ্রজ গণেশ ও অনুজ কার্তিক। দেবী দুর্গার কোলে দেব সেনাপতি কার্তিক অপূর্ব শোভায় ভাস্বর। বড়ো হয়েও অনুপম কার্তিকের মতো মায়ের কাছাকাছি থেকে মাতৃআজ্ঞা পালনে ব্যস্ত থাকে। তাই পরিণত বয়সেও তার স্বাধীন ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে না। ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপম পরিবারতন্ত্রের কাছে অসহায় ও ব্যক্তিত্বহীন একটি চরিত্র। উচ্চশিক্ষিত হলেও তার নিজস্বতা বলতে কিছু নেই। তাকে দেখলে মনে হয় আজও সে যেন মায়ের কোলে থাকা শিশুমাত্র। এজন্যই ব্যঙ্গ করে অনুপমকে গজাননের ছোটো ভাই কার্তিকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

অনুধাবন প্রশ্ন-৪: ‘ফল্গুর বালির মতো তিনি আমাদের সমস্ত সংসারটাকে নিজের অন্তরের মধ্যে শুষিয়া লইয়াছেন।’ কার কথা বলা হয়েছে? এ কথার তাৎপর্য কী?

উত্তর: অনুপমদের পরিবারে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের কারণে অনুপমের মামাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলা হয়েছে। ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমের আসল অভিভাবক তার মামা। অনুপমের জীবনের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই মামার ভূমিকাই প্রধান। তিনি অনুপমের চেয়ে মাত্র ছয় বছরের বড়ো। অথচ সংসারে তাঁর মতামত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ফল্গু একটি নদীর নাম। যার উপরের অংশে বালির আস্তরণ কিন্তু ভেতরে জলস্রোত প্রবাহিত। অনুপমের মামার সর্বেসর্বা হয়ে সমস্ত দায়-দায়িত্ব পালনের বিষয়টিকে এ নদীর সাথে তুলনা করা হয়েছে। অনুপমের মামা যেন ফল্গু নদীর বালির মতো তাদের সংসারটাকে নিজের অন্তরের মধ্যে শুষে নিয়েছেন। আর এ বিষয়টি বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।

অনুধাবন প্রশ্ন-৫: অনুপমকে কেন সংসারের কোনো কিছুর জন্য ভাবতে হতো না?

উত্তর: তার একমাত্র মামা সংসারের অভিভাবক হওয়ায় কোনো কিছুর জন্য তাকে ভাবতে হতো না। অনুপমের বাবা ছিলেন না এবং সংসারে ছিলেন মা আর মামা। তবে পিতার মৃত্যুর পর সব দায়িত্ব ছিল মামার হাতে এবং তিনিই সব খুঁটিনাটি বিষয়ে খেয়াল রাখতেন। তাই অনুপমকে সংসারের কোনো কিছুর জন্য ভাবতে হতো না।

অনুধাবন প্রশ্ন-৬: ‘কন্যার পিতা মাত্রেই স্বীকার করিবেন আমি সৎপাত্র’- কেন?

উত্তর: ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমকে মাতৃ-আজ্ঞাবহ, নিরীহ এক চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে- এখানে সে বিষয়টিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। ভালো মানুষ হওয়ার কোনো ঝঞ্জাট না থাকায় অনুপম স্বভাবতই একজন ভালো মানুষ। এমএ পাস অনুপম মায়ের আদেশ যথাযথভাবে পালন করে। এমনকি সে তামাক পর্যন্ত খায় না। আমাদের সমাজে বিয়ের প্রসঙ্গে সৎপাত্র সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করা হয়, এ সকল বৈশিষ্ট্য তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই অনুপমের বিশ্বাস- কন্যার পিতা মাত্রেই স্বীকার করবেন সে সৎপাত্র।

অনুধাবন প্রশ্ন-৭: “ভালো মানুষ হওয়ার কোনো ঝঞ্ঝাট নাই”— ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: মামার অভিভাবকত্বে বড়ো হওয়া অনুপম সমাজ-সংসারের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন সম্পর্কে সর্বদাই উদাসীন ছিল, যা প্রকাশ পেয়েছে প্রশ্নোক্ত কথাটিতে। অনুপম এমএ পাস করলেও সংসার বা সমাজের প্রতি তাকে কোনো দায়িত্ব পালন করতে হয় না। পিতার মৃত্যুর পর সংসারের অভিভাবকের দায়িত্ব তার মামাই পালন করেন। এমন দায়িত্ব-কর্তব্যহীন ভালো মানুষ হওয়া বেশ সহজ। কেননা যেখানে কোনো দায়িত্ব-কর্তব্য নেই সেখানে ভুল বা ঝঞ্ঝাটের কোনো আশঙ্কাও নেই। তাই গল্পে বলা হয়েছে, ‘ভালো মানুষ হওয়ার কোনো ঝঞ্ঝাট নাই।’

অনুধাবন প্রশ্ন-৮: অনুপম তার মামাকে ভাগ্যদেবতার প্রধান এজেন্ট বলেছেন কেন?

উত্তর: অনুপমের প্রতি তার মামার অভিভাবকত্বকে বোঝাতে গিয়ে ব্যঙ্গ করে অনুপমের ভাষায় বলা হয়েছে তিনি আমার ভাগ্যদেবতার এজেন্ট। অনুপমের বয়স যখন অল্প তখনই অনুপমের বাবা মারা যান, ফলে অনুপমের আসল অভিভাবক হয়ে ওঠে তার মামা। অনুপমের বাবা ওকালতি করে যে অর্থ উপার্জন করেছিলেন অনুপমের মামাই সেসবের দেখাশোনা করতেন। যেহেতু অনুপমদের অর্থনৈতিক দিকটি তার মামার নিয়ন্ত্রণে ছিল তাই অনুপমের সকল ব্যাপারেই তার মামার অভিভাবকত্ব। বিয়ের প্রসঙ্গ উঠলে মামার এই অভিভাবকত্বকে ব্যঙ্গ করে অনুপম মামাকে তার ভাগ্যদেবতার এজেন্ট বলে।

অনুধাবন প্রশ্ন-৯: হরিশ কীভাবে অনুপমের মন উতলা করে দিল?

উত্তর: অনুপমের বিয়ে প্রসঙ্গে হরিশ তাকে কল্যাণীর সন্ধান দেয়। হরিশ কানপুরে কাজ করে। ছুটিতে সে কলকাতা এসেছে। এদিকে অনুপমেরও পড়ালেখা শেষ হওয়ায় তার তেমন কোনো কাজ নেই। এমন অবকাশের সময় হরিশ একটি মেয়ের সন্ধান দিয়ে অনুপমের মন উতলা করে দিল।

অনুধাবন প্রশ্ন-১০: অনুপমের মামা কেন হরিশকে পেলে ছাড়তে চান না?

উত্তর: আসর জমাতে অদ্বিতীয় রসিক হরিশকে অনুপমের মামা পছন্দ করতো। হরিশকে সবাই খুব খাতির করে। কেননা তার সরস রসনার গুণ ও বাভঙ্গি সবাইকে মুগ্ধ করে। অনুপমের মামাও এজন্য তাকে খুব খাতির করেন। মূলত তার আসর জমানোর এই গুণের কারণেই মামা তাকে পেলে ছাড়তে চান না।

অনুধাবন প্রশ্ন-১১: ‘মেয়ের চেয়ে মেয়ের বাপের খবরটাই তাহার কাছে গুরুতর’— উক্তিটি বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর: বিয়েতে কল্যাণীর যোগ্যতার চেয়ে তার পিতা শম্ভুনাথ কী পরিমাণ পণ দিতে সক্ষম অনুপমের মামার কাছে সেটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। হরিশ অনুপমের মামার কাছে অনুপমের জন্য পাত্রীর সন্ধান দেয়। পাত্রীর কথা জানার চেয়ে মামার কাছে পাত্রীর বাবার বিষয়-সম্পত্তির ব্যাপারে জানার বেশি আগ্রহ দেখা যায়। রূপ বা গুণ নয় বরং তার বাবার আর্থিক সক্ষমতার মানদণ্ডে পাত্রীর যোগ্যতা যাচাই করে অনুপমের মামা । আলোচ্য উক্তিটিতে অনুপমের মামার যৌতুকলিপ্সার দিকটি উন্মোচিত হয়েছে।

অনুধাবন প্রশ্ন-১২: শম্ভুনাথ সেন পশ্চিমে গিয়ে বাস করছিলেন কেন?

উত্তর: দেশে বংশমর্যাদা রক্ষা করে চলা সহজ নয় বলে শম্ভুনাথ সেন পশ্চিমে গিয়ে বাস করছিলেন। এককালে শম্ভুনাথ সেনদের বংশে লক্ষ্মীর মঙ্গলঘট ভরা ছিল। টাকা-পয়সার কোনো অভাব ছিল না তাঁদের। কিন্তু বর্তমানে তেমন কিছু নেই বললেই চলে। আর সামান্য যা বাকি আছে তা দিয়ে বংশমর্যাদা রক্ষা করে চলা সহজ নয় বলে তিনি পশ্চিমে গিয়ে বাস করছিলেন।

অনুধাবন প্রশ্ন-১৩: ‘তাহারই পশ্চাতে লক্ষ্মীর ঘটটি একেবারে উপুড় করিয়া দিতে দ্বিধা হইবে না’- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: বিয়েতে বেশি পরিমাণে পণ পাওয়া যাবে বলেই অনুপমের মামা বিয়েতে রাজি হয়েছিলেন তা বুঝতে পেরেই অনুপমের মনে এমন ভাবোদয়ের সৃষ্টি হয়েছিল । অনুপম ও তার মামার কাছে কল্যাণীর পরিবারের বৈষয়িক অবস্থার বিবরণ দিয়েছিল হরিশ। হরিশের বর্ণনা অনুযায়ী, একসময় কল্যাণীর বংশে লক্ষ্মীর মঙ্গলঘট ভঁরা ছিল, অর্থাৎ ধনসম্পদে পরিপূর্ণ ছিল তারা। বর্তমানে তাদের অবস্থা কিছুটা খারাপ হলেও তা যৎসামান্য [‘যৎসামান্য’ অর্থ- অল্পতম, ক্ষুদ্র নয় । তাই কল্যাণীর পেছনেই লক্ষ্মীর ঘট, অর্থাৎ সমস্ত অর্থ উজাড় করে দিতে দ্বিধা করবেন না তার পিতা শম্ভুনাথ সেন।

অনুধাবন প্রশ্ন-১৪: ‘একে তো বরের হাট মহার্ঘ, তাহার পরে ধনুকভাঙা পণ – এই কথার অর্থ বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: পনেরো বছর বয়সেও কল্যাণীর বিয়ে না হওয়ার কারণ নির্দেশ করা হয়েছে উক্তিটির মাধ্যমে। কল্যাণীর বয়স পনেরো যা তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় বিয়ের যোগ্য কন্যার জন্য অনেকটাই বেশি। মোটা টাকা পণ দিতে হয় বলে সুপাত্র মেলাই ভার। তবে এ ব্যাপারে কল্যাণীর বাবা চিন্তিত নয়। বয়স যতই হোক উপযুক্ত পাত্র ছাড়া কন্যার বিয়ে না দিতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তখনকার সমাজে কন্যার পিতার এরূপ মনোভাবের প্রকাশ ঘটতে সাধারণত দেখা যেত না।

অনুধাবন প্রশ্ন-১৫: অনুপমের মামার মন কীভাবে নরম হলো?

উত্তর: ‘অপরিচিতা’ গল্পের হরিশ অনুপমের মামার কাছে কল্যাণী ও তার পরিবারের প্রশংসা করার ফলে মামার মন নরম হলো। বিয়ের পাত্রী তথা কল্যাণীর পারিবারিক অবস্থা, বংশমর্যাদার ব্যাপারে অনুপমের মামাকে বিশদ বর্ণনা দেয় হরিশ। সেসব কথা শুনে তিনি আশ্বস্ত হলেও কল্যাণীর বয়স বেশি মনে করে বিয়ে নিয়ে দ্বিধাগ্রস্তও হন। কিন্তু হরিশের ছিল সরস কথা দ্বারা মানুষের মনকে প্রভাবিত করার বিশেষ গুণ। তাই তো পরে তার কাছ থেকে পাত্রী ও তার পরিবারের বিষয়ে নির্ভরযোগ্য প্রশংসাবাক্য শুনে মামার মন নরম হয়েছিল।

অনুধাবন প্রশ্ন-১৬: অনুপমের বিয়ের ভূমিকা অংশটি নির্বিঘ্নে সমাধা হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: হরিশের সরস রসনার গুণে অনুপমের মামা কল্যাণীর সাথে অনুপমের বিয়েতে সম্মত হয়েছিলেন। অনুপমের বন্ধু হরিশ রসিক প্রকৃতির হওয়ায় মামা তাকে পছন্দ করতেন। অনুপমের বিয়ের ব্যাপারে মামাকে রাজি করানোর দায়িত্ব ছিল হরিশের ওপর। হরিশের সরস রসনার গুণে মামার মন নরম হয়েছিল। এ কারণেই অনুপমের বিয়ের ভূমিকা অংশটা নির্বিঘ্নে সমাধা হয়েছিল।

অনুধাবন প্রশ্ন-১৭: অনুপম নিজ চোখে মেয়ে দেখার প্রস্তাব করতে পারেনি কেন?

উত্তর: সাহসের অভাবে অনুপম নিজ চোখে মেয়ে দেখার প্রস্তাব করতে পারেনি। অনুপমের প্রকৃত অভিভাবক ছিলেন মামা। মা ও মামার কথার বাইরে অনুপম নিজ থেকে কোনো কথা বলতে পারত না। কারণ ছোটোবেলা থেকেই সে এমনভাবে বড়ো হয়েছে যে কোনো মতামত বা ইচ্ছা পোষণের সাহস তার ছিল না। তাই বিয়ের সময়ও সে নিজ চোখে মেয়ে দেখার প্রস্তাব করতে পারেনি।

অনুধাবন প্রশ্ন-১৮: ‘আমার ভাগ্যে প্রজাপতির সঙ্গে পঞ্চশরের কোনো বিরোধ নাই’- বাক্যটির তাৎপর্য কী?

উত্তর: প্রশ্নোক্ত বাক্যটিতে অনুপমের ভাগ্যের সুপ্রসন্নতার কথা বলা হয়েছে। অনুপমের বিবাহের জন্য কন্যাকে আশীর্বাদ করতে তার পিসতুতো ভাই বিনুকে পাঠানো হলো। সে ফিরে এসে কন্যার প্রশংসা করে। বিনু খুবই রুচিশীল মানুষ, সে অল্প কথায় অনেক অর্থ প্রকাশ করে। সে যখন বলে খাঁটি সোনা, তখন অনুপমের বুঝতে বাকি থাকে না যে তার জন্য যে পাত্রী পছন্দ করা হয়েছে, সে অনন্য গুণসম্পন্ন নারী। তার ভাগ্যে বিবাহের দেবতা প্রজাপতি ও প্রেমের দেবতা মদনের শুভদৃষ্টি পড়েছে। উভয় দেবতার মধ্যে আশীর্বাদের কোনো রকম বিরোধ নেই।

অনুধাবন প্রশ্ন-১৯: মামা, কীভাবে অনুপমদের সমস্ত সংসারের প্রধান গর্বের সামগ্রীতে পরিণত হলেন?

উত্তর: কোনো অবস্থাতেই ঠকতে না চাওয়ার মাধ্যমে মামা অনুপমদের সমস্ত সংসারের প্রধান পর্বের সামগ্রীতে পরিণত হলেন । অনুপমদের সংসারের যাবতীয় ভার ছিল মামার ওপর। তিনি তাদের সমস্ত সংসারটাকে আগলে রেখেছিলেন। অনুপমের বিয়ের পণ নির্ধারণেও তিনি চাতুর্যের পরিচয় দিয়েছেন। মামা তাঁর দক্ষতার জন্যই অনুপমদের সমস্ত সংসারের প্রধান গর্বের সামগ্রীতে পরিণত হলেন।

অনুধাবন প্রশ্ন-২০: অনুপমের বিবাহযাত্রার বর্ণনা দাও।

উত্তর: অনুপম মহাসমারোহের সাথে বিয়ে করতে গিয়েছিল। ধনী ঘরের ছেলে অনুপম। তাই তার বিয়েতে ছিল আভিজাত্যের ছোঁয়া। ব্যান্ড, বাঁশি, কন্সার্ট কোনো কিছুরই কমতি ছিল না। দামি পোশাক ও বাহারি গহনায় জড়ানো ছিল অনুপমের শরীর। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে যেন ভাবী শ্বশুরের সঙ্গে আভিজাত্যের মোকাবিলা করতে বিয়ের আসরে যাচ্ছে।

অনুধাবন প্রশ্ন-২১: ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমের মামা বিয়েবাড়িতে ঢুকে খুশি হলেন না কেন?

উত্তর: কল্যাণীদের আয়োজন অতি সামান্য এবং অনাড়ম্বর হওয়ার অনুপমের মামা বিয়েবাড়িতে ঢুকে খুশি হলেন না। তিনি দেখলেন, একে তো উঠানটাতে বরযাত্রীদের জায়গা সংকুলান হওয়াই শক্ত, তাহার পরে সমস্ত আয়োজন নিতান্ত মধ্যম রকমের। ইহার পরে শম্ভুনাথবাবুর ব্যবহারটাও নেহাত ঠাণ্ডা। তাঁর বিনয়টা অজস্র নয়। মুখে তো কথাই নাই। তাই অনুপমের মামা বিয়েবাড়িতে ঢুকে খুশি হলেন না।

অনুধাবন প্রশ্ন-২২: মামা কেন শম্ভুনাথ বাবুকে পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে যান?

উত্তর: অনুপমের মামা ভাগিনার বিয়ের আগে কন্যার গহনা পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন বলে শম্ভুনাথ বাবুকে পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে যান অনুপমের মামার জীবনের লক্ষ্য হলো কারো কাছে ঠকবেন না। শম্ভুনাথ সেন গহনা কম দিয়ে বা খাদযুক্ত গহনা দিয়ে তাঁকে ঠকাতে পারেন। এরূপ ভাবনা থেকে তিনি বিয়ের আগেই গহনাগুলো যাচাই করে দেখতে চান। আর এ জন্যই শম্ভুনাথ বাবুকে পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে যান তিনি।

অনুধাবন প্রশ্ন-২৩: মামা কেন বিয়ের কাজ শুরু হবার আগেই কনের সব গয়না যাচাই করে দেখতে চাইলেন?

উত্তর: ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমের মামার অবিশ্বাসী মানসিকতার কারণে তিনি এমন আচরণ করেছিলেন। মামার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য তিনি কারো কাছে ঠকবেন না। তাঁর ভয় ছিল তাঁর বেয়াই তাঁকে গহনায় ফাঁকি দিতে পারেন। আর বিয়ের কাজ শেষ হয়ে গেলে ফাঁকির প্রতিকার সম্ভব নয়। তাই বিয়ের কাজ শুরু হবার আগেই মামা কনের সব গহনা যাচাই করে দেখতে চাইলেন।

অনুধাবন প্রশ্ন-২৪: অনুপমের মামা সেকরাকে বিয়েবাড়িতে এনেছিল কেন?

উত্তর: অনুপমের মামা যৌতুকলোভী ও হীন মানসিকতার মানুষ হওয়ায় বিয়ের গহনা পরীক্ষা করতে সেকরাকে বিয়েবাড়িতে এনেছিলেন। কল্যাণীর বিয়েতে তার বাবা শম্ভুনাথ সেন নগদ পণের সঙ্গে অনেক গহনা দেন। অনুপমের মামা শম্ভুনাথ সেনের কথায় আস্থাশীল ছিলেন না। কন্যাপক্ষ যে গহনা দেবে তা আসল না নকল সেটি পরীক্ষা করার জন্য তিনি বিয়েবাড়িতে সেকরাকে সঙ্গে এনেছিলেন।

অনুধাবন প্রশ্ন-২৫: ‘এসব কথায় আমার সম্পূর্ণ অনধিকার’- কোন প্রসঙ্গে কেন বলা হয়েছে?

উত্তর: অনুপমের যৌতুকলোভী মামা যখন কনের সব গহনা যাচাই করতে চাইলেন তখন কনের বাবা অনুপমের মতামত জানতে চাইলে অনুপম ইশারার মাধ্যমে উদ্ধৃত কথাটির পক্ষে অবস্থান নেয়। অনুপমের বিয়ের লগ্ন উপস্থিত হলে তাঁর লোভী মামা কল্যাণীর সমস্ত গহনা পরখ করার জন্য সেকরাকে ডেকে নিয়ে আসেন। তখন কনের বাবা শম্ভুনাথ সেন অনুপমের মতামত জানতে চান। কিন্তু অনুপমের ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তার অভাবের কারণে তিনি তাঁর মামার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারেন না। তাই মামার অন্যায় আবদারেও চুপ করে থাকেন এবং বলেন এসব ব্যাপারে কথা বলার অধিকার তাঁর নেই।

অনুধাবন প্রশ্ন-২৬: শম্ভুনাথ বাবু কেন মেয়ের গা থেকে সমস্ত গহনা খুলে আনলেন?

উত্তর: ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমের মামার বিয়ের দিনে সেকরা দিয়ে কল্যাণীর গায়ের গহনা পরীক্ষা করতে চাওয়ায় তিনি মেয়ের গা থেকে সমস্ত গহনা খুলে আনেন। অনুপমের মামা শম্ভুনাথ সেনের মুখের কথায় নির্ভর করতে পারেননি। বলে সেকরাকে সঙ্গে করে এনেছিলেন। মামা শম্ভুনাথ সেনকে জানালেন যে, তিনি সমস্ত গহনা যাচাই করে দেখতে চান। শম্ভুনাথ এ ব্যাপারে বরের মতামত জানতে চাইলে অনুপম নিশ্চুপ থাকে। এরপর শম্ভুনাথ বাবু মেয়ের গা থেকে সমস্ত গহনা খুলে নিয়ে আসেন।

অনুধাবন প্রশ্ন-২৭: মামার মুখ লাল হয়ে উঠল কেন?

উত্তর: নিজের ফাঁকি ধরা পড়ায় লজ্জায় মামার মুখ লাল হয়ে উঠল । মামা সেকরাকে সঙ্গে এনেছিলেন কল্যাণীর গহনার খাদ যাচাইয়ের জন্য । কিন্তু মেয়ের গয়নায় কোনো খাদ না থাকায় এবং গহনা ওজনে দাবির তুলনায় বেশি হওয়ায় মামা বিপাকে পড়লেন। অন্যদিকে, বরপক্ষের দেওয়া এয়ারিংয়ে সোনার ভাগ সামান্য থাকায় এবং মেয়ের বাবা সেটি ফেরত দেওয়ায় মামা রাগে ও লজ্জায় লাল হয়ে উঠলেন।

অনুধাবন প্রশ্ন-২৮: ‘বলিলেন, সে কী কথা! লগ্ন – কে, কেন বলেছিল। প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: কল্যাণীর বিয়ের গহনা পরীক্ষা করানোর পর শম্ভুনাথ বরপক্ষকে খাবার কথা বললে অনুপমের মামা অবাক হয়ে লগ্নের কথা উল্লেখ করে। অনুপমের মামা কল্যাণীর গয়না যাচাই করে দেখতে চাইলে শম্ভুনাথ সেনের আত্মসম্মানে আঘাত লাগে। অনুপম এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করলে শম্ভুনাথ স্থির করেন তিনি এমন ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দেবেন না। তাই নিয়ম না থাকলেও শম্ভুনাথ বরকে বিয়ের পূর্বেই খাওয়ার কথা বলেন। আর এতে বিস্মিত হয়ে অনুপমের মামা শম্ভুনাথকে লগ্নের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

অনুধাবন প্রশ্ন-২৯: ‘আপনাদের গাড়ি বলিয়া দিই।’ ব্যাখ্যা করো?

উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে কল্যাণীর বিয়ের গহনা পরীক্ষা করানোর কারণে অপমানিত শম্ভুনাথের প্রতিবাদের দিকটি প্রকাশিত হয়েছে । বরপক্ষ মেয়ের গহনা যাচাই করতে চাওয়ায় শম্ভুনাথ সেন খুব অপমান বোধ করেন। আর এ ব্যাপারে বর নিশ্চুপ থাকায় তিনি খুব অবাক হয়ে যান । তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যারা তাঁকে বিশ্বাস করেন না, তাদের হাতে মেয়ে তুলে দেবেন না। তাই বিয়ের আসরে যাওয়ার পরিবর্তে তিনি পাত্র পক্ষকে খাইয়ে দেন। খাওয়া শেষ হলে তিনি বরপক্ষকে বিদায় দেওয়া প্রসঙ্গে উক্তিটি করেন। এটা শম্ভুনাথের সংক্ষুব্ধ মনের ভদ্রজনোচিত প্রকাশ।

অনুধাবন প্রশ্ন-৩০: ‘ঠাট্টা তো আপনিই করিয়া সারিয়াছেন’— বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: কল্যাণীর সাথে অনুপমের বিয়ে ভেঙে দেওয়ার মাধ্যমে অনুপমের মামার প্রতি শম্ভুনাথ সেনের ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে আলোচ্য উক্তিটিতে। বিয়ের পূর্বমুহূর্তে অনুপমের মামা কনের পরিহিত সকল গহনা পরীক্ষা করে দেখতে চান। তাঁর এ অসংগত প্রস্তাব দৃঢ়চিত্ত শম্ভুনাথ সেনের আত্মমর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করে। তাই কৌশলে বরযাত্রীদের খাইয়ে দিয়ে তাঁদের তিনি বিদায় জানান। এরূপ আচরণে অনুপমের মামা আশ্চর্য হয়ে মন্তব্য করলে তার প্রত্যুত্তরে শম্ভুনাথ সেন প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেন। মূলত বিয়ের আগে গহনা নিয়ে মামার অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের কারণেই শম্ভুনাথ বিয়ে ভাঙার কথা বলেছেন।

অনুধাবন প্রশ্ন-৩১: “ঠাট্টার সম্পর্কটাকে স্থায়ী করিবার ইচ্ছা আমার নাই” – উক্তিটি কোন প্রসঙ্গে করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: অনুপমের সাথে কল্যাণীর বিয়ে ভেঙে দেওয়াটাকে অনুপমের মামা ঠাট্টা মনে করলে শম্ভুনাথ সেন এ কথা বলেছিলেন। অনুপমের মামা বিয়ের আগেই সেকরা দিয়ে কনের গায়ের গহনা যাচাই করে দেখেতে চান তা আসল কি না। এ কারণে শম্ভুনাথ সেন অপমান বোধ করেন। মামার হীন আচরণের ব্যাপারে পাত্রের নির্লিপ্ততা দেখে তিনি এমন ব্যক্তিত্বহীন ছেলের সাথে মেয়ে বিয়ে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাই তিনি পাত্রপক্ষকে যথাযথ আপ্যায়নের পর গাড়ি ডেকে বিদায় দিতে চাইলে অনুপমের মামা এ বিষয়টি ঠাট্টা মনে করেন । এর জবাবে তিনি বলেন ‘ঠাট্টার সম্পর্ককে স্থায়ী করিবার ইচ্ছা আমার নাই।’

অনুধাবন প্রশ্ন-৩২: অনুপমের মামা কেন অবাক হয়ে গেলেন?

উত্তর: শম্ভুনাথ সেন সেকরা দিয়ে গহনা পরীক্ষা করিয়ে তাঁকে অপমান করার জন্য মেয়েকে পাত্রস্থ করতে চাইলেন না বলে অনুপমের মামা অবাক হয়ে গেলেন। মামা কনের গহনা যাচাই করে দেখতে চাওয়ায় শম্ভুনাথ সেন খুব কষ্ট পান এবং তাঁর আত্মসম্মানে আঘাত লাগে। আর বরও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকায় তিনি সিদ্ধান্ত নেন মেয়েকে এ বাড়িতে বিয়ে দেবেন না। তাই তিনি মামাকে গহনা যাচাই করে দেখান ঠিকই, বিয়ের খাবারও খাওয়ান কিন্তু তারপর বলেন যে, সম্পর্কটা স্থায়ী করার ইচ্ছা তাঁর নেই। আর এ কথা শুনে মামা অবাক হয়ে যান।

অনুধাবন প্রশ্ন-৩৩: শম্ভুনাথ অনুপমের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিলেন না কেন?

উত্তর: বিয়ের দিনে অনুপমের মামা হীন মানসিকতা দেখালেও অনুপম তার কোনো প্রতিবাদ করেনি বলে শম্ভুনাথ অনুপমের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিলেন না। অনুপমের যৌতুকলোভী মামা মেয়ের বিয়েতে শম্ভুনাথের দেওয়া স্বর্ণালঙ্কার সেকরা দিয়ে যাচাই করে। তার এ হীন মানসিকতা শম্ভুনাথের ব্যক্তিমর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করে। অন্যদিকে, মামার এ আচরণে অনুপমের নির্বিকার থাকা তার পৌরুষহীন, ব্যক্তিত্বরহিত চরিত্রকেই সুস্পষ্ট করে তোলে। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন শম্ভুনাথ স্বাভাবিকভাবেই এমন নীচ পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান।

অনুধাবন প্রশ্ন-৩৪: শম্ভুনাথ সেন কেন অনুপমকে একটি কথা বলারও আবশ্যক বোধ করলেন না?

উত্তর: ‘অপরিচিতা’ গল্পে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনুপমের গুরুত্বহীনতার কথা বুঝতে পেরে শম্ভুনাথ সেন অনুপমকে একটি কথাও বলার আবশ্যকতা বোধ করলেন না। মেয়ের গহনা যাচাইয়ের ব্যাপারে শম্ভুনাথ সেন অনুপমের মতামত জানতে চাইলে সে কোনো মতামত দিতে পারে না। অনুপমকে শম্ভুনাথ সেন খেতে বললেও মামার আদেশ অমান্য করে সে খায় না। এসব কারণে শম্ভুনাথ বাবু বুঝতে পারেন, অনুপমের কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই পরবর্তীতে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত শম্ভুনাথ একাই নেন, অনুপমের মতামত জানার প্রয়োজনবোধ করেন না।

অনুধাবন প্রশ্ন-৩৫: গল্পকথকদের বাড়ির সকলে রেগে আগুন হলো কেন?

উত্তর: অনুপমের মামার দ্বারা অপমানিত হয়ে শম্ভুনাথ সেনের মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে বরযাত্রীদের বিদায় করে দেওয়ায় অপমানিত বোধ করে গল্পকথকের বাড়ির সকলে রেগে আগুন হলো। অনুপমের মামা শম্ভুনাথ সেনকে বলেন যে, তিনি কনের গহনা যাচাই করে দেখতে চান। এজন্য শম্ভুনাথ অপমান বোধ করেন। আর এ ব্যাপারে গল্পকথক নিশ্চুপ থাকায় তিনি সিদ্ধান্ত নেন মেয়েকে অনুপমের সাথে বিয়ে দেবেন না। তাই গহনা যাচাই করে দেখিয়ে, বরপক্ষকে খাইয়ে বিদায় করে দেন। ফলে গল্পকথকের বাড়ির সকলে রেগে আগুন হয়ে যায়।

অনুধাবন প্রশ্ন-৩৬: ‘বাংলাদেশের মধ্যে আমিই একমাত্র পুরুষ যাহাকে কন্যার বাপ বিবাহ আসর হইতে নিজে ফিরাইয়া দিয়াছে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: বিয়ের দিনে অনুপমের ব্যক্তিত্বহীনতার পরিচয় পেয়ে শম্ভুনাথ সেন কল্যাণীর সাথে তার বিয়ে ভেঙে দেওয়ার মতো অভাবনীয় কাণ্ডে অনেকটা হতবিহ্বল হয়ে অনুপম এ কথা বলেছে। অনুপমের বিয়ের লগ্ন উপস্থিত হলে তার লোভী মামা কল্যাণীর বাবার কথায় আস্থা না রেখে বিয়ের আগেই সমস্ত গহনা সেকরা দিয়ে পরখ করাতে চান। আর এ সময় অনুপম কোনো প্রতিবাদ না করায় শম্ভুনাথ অপমানিত বোধ করেন এবং কন্যাদানে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। এ রকম ঘটনা সচরাচর লক্ষ করা যায় না। এরূপ পরিস্থিতিতে শম্ভুনাথ সেন কর্তৃক অনুপমের অপমানের দিকটিকে বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত উক্তিটির উল্লেখ করা হয়েছে।

অনুধাবন প্রশ্ন-৩৭: এক পদক্ষেপের দূরত্বটুকু কীভাবে এক মুহূর্তে অসীম হয়ে উঠল? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় এক পদক্ষেপের দূরত্বটুকু এক মুহূর্তে অসীম হয়ে উঠল। অনুপমের মামা বিয়ের আগেই কনের সমস্ত গহনা যাচাই করে নিতে চাইলে কনের বাবা শম্ভুনাথ সেন তাতে অপমানবোধ করেন। তাই তিনি কৌশলে বরযাত্রীদের খাইয়ে দিয়ে বিয়ে ভেঙে দেন। বর অনুপম কনের বাবার এরূপ ব্যবহারে ক্রুদ্ধ হলেও কল্যাণীর প্রতি মোহাবিষ্ট ছিল। বিয়ের লগ্ন যখন প্রস্তুত তখন তার প্রণয়াসন্ধিকে উপেক্ষা করে আকস্মিকভাবে বিয়ে ভেঙে যাওয়া প্রকৃতপক্ষেই তাদের মধ্যে অসীম দূরত্ব তৈরি করেছে।

অনুধাবন প্রশ্ন-৩৮: অনুপমের মন পুলকের আবেশে ভরে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: কল্যাণী বিয়ে না করার পণ করেছে— এ কথা শুনে অনুপমের মন পুলকের আবেগে ভরে যায়। অনুপম ও কল্যাণীর বিয়ে না হলেও অনুপম কল্যাণীকে ভুলতে পারেনি। অনুপম সবসময় প্রত্যাশা করত কল্যাণী তার কাছে ফিরে আসবে । মনে মনে সে কল্যাণীর অন্য কোথাও বিয়ে হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত থাকত। কিন্তু যখন শুনতে পেল, কল্যাণী, বিয়ে করবে না বলে পণ করছে তখন তার মন পুলকের আবেশে ভরে যায়।

অনুধাবন প্রশ্ন-৩৯: ‘গাড়িতে জায়গা আছে’- উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘গাড়িতে জায়গা আছে’- উক্তিটি কল্যাণীর। অনুপম এবং তার মা তীর্থযাত্রায় যাওয়ার সময় কানপুর স্টেশনে অনুপম একটি নারীকণ্ঠ শুনে মুগ্ধ হয়ে যায়। পরে যখন অনুপম গাড়িতে জায়গা পাচ্ছিল না, এমন সময় সেই মেয়েটি অনুপমের মাকে লক্ষ করে বলে, তাদের গাড়িতে জায়গা আছে এবং সেখানে গিয়ে বসতে।

অনুধাবন প্রশ্ন-৪০: এ কেবল একটি মানুষের পলা, শুনিলেই মন বলিয়া ওঠে, *এমন তো আর শুনি নাই।’- অনুপমের এমন মনে হওয়ার কারণ কী? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: কানপুর স্টেশনে অচেনা এক নারীর মধুর কণ্ঠস্বর শুনে অনুপমের এ রকম মনে হয়। অনুপম চিরকাল গলার স্বরের পূজারি। তার মতে, মানুষের মধ্যে যা অন্তরতম এবং অনির্বচনীয় তার চেহারাই হচ্ছে কণ্ঠস্বর। হঠাৎ অচেনা এক নারীর কণ্ঠস্বর শুনে সে মুগ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু শুধু নারীর গলার স্বর বলে সেটিকে তিনি সুন্দর বলতে চান না। বরং এ কণ্ঠস্বরটি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার মধ্যেই ভালো। অনুপমের মতে, যে কেউ এ গলার স্বর শুনে মুগ্ধ হবে।

অনুধাবন প্রশ্ন-৪১: ‘আমি তো চমকিয়া উঠিলাম’- কথাটি বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর: আলোচ্য কথাটির মাধ্যমে কল্যাণীর সুমধুর কণ্ঠ শুনে অনুপমের চমকে ওঠা ভাবকে বোঝানো হয়েছে। কানপুর স্টেশনে অনুপম একটি নারীকণ্ঠ শুনে মুগ্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে অনুপমের হৃদয়পটে সেই কণ্ঠস্বরটি বাজতে থাকে। পরে যখন অনুপম গাড়িতে জায়গা পাচ্ছিল না, এমন সময় সেই মেয়েটি অনুপমের মাকে লক্ষ্য করে বলে, তাদের গাড়িতে জায়গা আছে এবং সেখানে গিয়ে বসতে। আর এভাবেই সেই কণ্ঠটি আবার শুনে অনুপম চমকে ওঠে। এখানে মূলত, কল্যাণীর আশ্চর্যসুন্দর কণ্ঠস্বর শুনে পুলকিত অনুপমের মানসিক অবস্থাকে বোঝানো হয়েছে।

অনুধাবন প্রশ্ন-৪২: ‘সেই সুধাকণ্ঠের সোনার কাঠিতে সকল কথা যে সোনা হইয়া ওঠে।’ এ কথা কেন বলা হয়েছে?

উত্তর: আলোচ্য উক্তিটিতে কল্যাণীর কণ্ঠের মিষ্টতাকে বোঝানো হয়েছে। ট্রেনে ভ্রমণকালে কল্যাণীর সঙ্গে দু-তিনটি ছোটো ছোটো মেয়ে ছিল। তারা বারবার কল্যাণীর কাছে বায়না ধরছিল গল্পের বই থেকে গল্প পড়ে শোনাতে। অনুপমের মনে হলো, এই গল্প তারা কল্যাণীর মুখ থেকে পূর্বে বিশ-পঁচিশবার হয়তো শুনেছে। তবু তাদের এত আগ্রহের একমাত্র কারণ হচ্ছে, কল্যাণীর সুমধুর কণ্ঠের কথামালার সৌন্দর্য। অনুপম অনুভব করল, কল্যাণীর কণ্ঠের মিষ্টতায় সাধারণ কথাও অসাধারণ ব্যঞ্জনদীপ্ত হয়ে ওঠে।

অনুধাবন প্রশ্ন-৪৩: শম্ভুনাথ সেনের হৃদয় কীভাবে গলেছিল?

উত্তর: অনুপম কানপুরে এসে কল্যাণীর পিতার কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে কল্যাণীকে বিয়ের বিষয়ে রাজি করায়। শম্ভুনাথ সেন অনুপমের মামার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে কল্যাণীকে বিয়ে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ থেকে বোঝা যায়, তিনি কঠিন হৃদয়ের মানুষ। কিন্তু একপর্যায়ে অনুপম যখন কল্যাণীকে ফিরে পাবার আশায় তাঁর কাছে মাথা হেঁট করে, হাত জোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করে; তখন তাঁর হৃদয় গলে যায়।

অনুধাবন প্রশ্ন-৪৪: ‘তার পরে বুঝিলাম, মাতৃভূমি আছে’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: পুনর্বার বিয়েতে রাজি না হওয়ায় কল্যাণী সম্পর্কে আলোচ্য উক্তিটি করেছে অনুপম। অনুপম কানপুরে এসে কল্যাণী ও তার পিতার সামনে হাতজোড় করে, মাথা হেঁট করে ক্ষমা চেয়ে আবার বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কল্যাণী ততদিনে দাম্পত্য জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে, সে মনোযোগী হয়েছে দেশমাতৃকার সেবার প্রতি। তাই অনুপমকে ফিরিয়ে দিয়ে সে বলে ‘মাতৃ-আজ্ঞা’ আছে। অনুপম বুঝতে পারে, মাতৃ-আজ্ঞা মানে মাতৃভূমির জন্য কল্যাণীর উৎসর্গিত প্রাণ। তাই অনুপম বলেছে ‘তারপর বুঝিলাম, মাতৃভূমি আছে।’

অনুধাবন প্রশ্ন-৪৫: কল্যাণী কেন মেয়েদের শিক্ষার ব্রত গ্রহণ করেছিল?

উত্তর: অনুপমের সাথে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর কল্যাণী দেশসেবার মাধ্যম হিসেবে মেয়েদের শিক্ষার ব্রত গ্রহণ করেছিল। কল্যাণী তার বাবার মতোই আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন ছিল। তাই অনুপমের সাথে বিয়ে ভাঙার পর সে অন্য কোনো সম্পর্কে জড়াতে চায়নি। তাই সে বিয়ে না করে মেয়েদের শিক্ষার ব্রত গ্রহণ করে।

অনুধাবন প্রশ্ন-৪৬: মা কেন অনুপমকে ছাড়তে পারেননি?

উত্তর: অনুপম তার পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান ছিল বলে মা অনুপমকে ছাড়তে পারেননি। অনুপম যখন খুব ছোটো তখন তার বাবা মারা যান। সে তার মায়ের হাতেই মানুষ। কল্যাণীর সাথে বিয়ে ভেঙে যাবার পরও অনুপম তার সাথে দেখা করতে কানপুর যায় মায়ের আজ্ঞাকে অবহেলা করে। এসব কিছু তার মা পছন্দ না করলেও একমাত্র ছেলে হওয়ায় অনুপমকে তিনি ছাড়তে পারেন না।

অনুধাবন প্রশ্ন-৪৭: ‘কিন্তু ভাগ্য আমার ভালো, এই তো আমি জায়গা পাইয়াছি’— বক্তার এমন অনুভূতির কারণ বুঝিয়ে লেখো। বা, “এই তো আমি জায়গা পাইয়াছি।” ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে অনুপম কল্যাণীর কাছাকাছি থাকা বলতে তার হৃদয়ে জায়গা পাওয়ার কথা বুঝিয়েছে। কানপুরে পৌছে কল্যাণীর পরিচয় জানতে পেরে অনুপমের হৃদয় আবারো কল্যাণীর চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়। সে কল্যাণীকে বিয়ে করতে চাইলেও কল্যাণী রাজি হয় না। কল্যাণীর কাছাকাছি থাকার জন্য সে কানপুরেই বসবাস করতে শুরু করে। সুযোগ পেলেই সে কল্যাণীর কাজে সাহায্য করে। কল্যাণীর আশপাশে থাকার সুযোগটুকুকেই সে পরম পাওয়া মনে করে আর ভাবে— জীবনসঙ্গী হিসেবে পাইনি; কিন্তু কাছে থাকার সুযোগটুকুই বা কম কীসে।

এখানে এইচএসসি বাংলা ১ম পত্রের অপরিচিতা গল্পের মোট ৪৭টি অনুধাবন প্রশ্ন বা অনুধাবনমূলক প্রশ্ন দেওয়া হলো। এখান থেকে চাইলে এর পিডিএফও ডাউনলোড করা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button