Bangla

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সম্পর্কে বাবা ও মেয়ের মধ্যে সংলাপ রচনা

এখানে বাংলা ২য় পত্রের লিখিত অংশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সম্পর্কে বাবা ও মেয়ের মধ্যে সংলাপ রচনা দেওয়া হলো।

বর্তমান সময়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। বাংলা ২য় পত্র বা বাংলা ব্যাকরণের লিখিত অংশের গুরুত্বপূর্ণ টপিক হলো সংলাপ রচনা। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রায়ই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সম্পর্কে সংলাপ রচনা এসে থাকে। তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সম্পর্কে বাবা ও মেয়ের মধ্যে সংলাপ বা কথোপকথন নিচে দেওয়া হলো।

বাবা: কীরে কিছু বলবি মনে হচ্ছে?

মেয়ে: হ্যা বাবা। কাল আমাদের কলেজে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। বিষয় ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’। সেমিনারে আমাকে বক্তা হিসেবে নির্বাচন করেছে।

বাবা: বেশ তো। খুবই খুশির সংবাদ।

মেয়ে: বাবা সেমিনারে অনেক প্রাজ্ঞজন কথা বলবেন। তাদের মাঝে আমি কী বলব তাই নিয়ে ভাবছি।

বাবা: ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। আমি একবার কলেজজীবনে ‘প্রতিভা’ বিষয়ে বক্তৃতা দিয়েছিলাম। আমার কথা শুনে সবাই হাসাহাসি করল। প্রতিভা বিষয়ে আমি কোনো পড়াশোনা করে কথা বলিনি, বরং বিষয়টিকে আমি যেভাবে উপলব্ধি করেছি সেভাবেই বলেছি। বক্তৃতা শেষে হাততালি পড়ল অনেক। আমি বোকার মতো এসে সিটে বসলাম, ভালো-মন্দ কিছুই বুঝলাম না। কিন্তু বক্তৃতায় হয়েছিলাম প্রথম। তাই বলছি ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’ বিষয়টিকে তুমি যেভাবে উপলব্ধি করছ সেভাবেই বলবে। দেখবে তোমার কথা সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে।

মেয়ে: হ্যাঁ, বাবা। আমরা এখন যে পরিস্থিতির মুখোমুখি তাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ণ রাখা খুবই জরুরি।

বাবা: সেকথা মাথায় রেখেই তো শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’র সপক্ষে মিটিং-মিছিলসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও পরমত সহিষ্ণুতার শক্ত সুতোয় গাঁথতে না পারলে দেশে কখনো শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে না।

মেয়ে: বাবা তুমি ঠিকই বলেছ। একটি দেশে নানা বর্ণের, নানা ধর্মের মানুষ বসবাস করে। দেশ তো সবার। ধর্ম- বর্ণ-শ্রেণি বৈষম্যের উপরে দেশের স্থান।

বাবা: বাহ বাহ্! বেশ বলেছ। ধর্ম, বর্ণ আর সম্প্রদায়ভিত্তিক এরকম ভেদবুদ্ধি আর সংঘাতের নামই তো সাম্প্রদায়িকতা। আমাদের সভ্যতার বীজমন্ত্রই হলো ‘বিভেদের মধ্যে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’। মানুষের সবচেয়ে বড়ো পরিচয় হলো সে মানুষ। তার প্রথম পরিচয় মানুষ, দ্বিতীয় পরিচয় মানুষ এবং সবশেষ পরিচয়ও মানুষ। এখানেই মানুষের মনুষ্যত্ব এবং এখানেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব।

মেয়ে: ঠিকই বলেছ বাবা, সাম্প্রদায়িকতা মানে সংঘাত। তাছাড়া আমরা তো একই সুতোয় গাঁথা হয়ে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিষ্টান নানা জাত ও ধর্মের মানুষ যুগ যুগ ধরে বাস করছি পাশাপাশি। এটিই তো আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বাঙালির মূল পরিচয়।

বাবা: একেবারে মূল কথাটি বলেছ। এই অসাম্প্রদায়িক চেতনাই মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মিলিত করতে পেরেছিল এবং অভিন্ন ঐক্য-সত্তায় মিলিত হয়ে আমরা দেশকে স্বাধীন করতে পেরেছিলাম। অসাম্প্রদায়িকতার মধ্যেই মানবিক চেতনা, মানবিকতার উন্মেষ। মানুষে মানুষে মিলনের সুর বেজে ওঠে অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের মধ্য দিয়ে। তবু মাঝে মাঝে সাম্প্রদায়িকতার আগুন জ্বলে ওঠে কেন— জানো?

মেয়ে: বাবা, আমার তো মনে হয়- একদল স্বার্থান্বেষী ভেদবুদ্ধি-সম্পন্ন মানুষ সংকীর্ণ কুমতলব চরিতার্থ করার লালসায় সাম্প্রদায়িকতার আগুন উসকে দেয় বলে।

বাবা: তোমার ধারণা ঠিক। সাধারণভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার কারণ তাই। তবে বিভিন্ন ঘটনাকে ঘিরে এরকম হীন মনোবৃত্তির প্রকাশ ঘটে। এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এবং দেশ ও জাতির শত্রু। এরা কখনোই দেশপ্রেমিক বা মানবপ্রেমিক নয়।

মেয়ে: বাবা তোমার সঙ্গে আলোচনা করে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আমি নিশ্চিত আগামী কালের বক্তৃতায় আমি ভালো করব।

বাবা: নিশ্চয়ই। শুধু বক্তৃতাই বড় কথা নয়, অসাম্প্রদায়িক মনোভাবটি মানুষের শ্রেষ্ঠ অর্জন কথাটিও স্মরণ রাখবে। বিশ্বভ্রাতৃত্ব বন্ধনই আজকের বিশ্বের মানুষের লক্ষ্য। মানুষ এই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলছে। হানাহানি নয়, সংঘাত নয়, সম্প্রীতিই আমাদের বাঁচার পথ, শান্তির পথ, সুস্থ জীবনাচরণের পথ।

মেয়ে: অবশ্যই বাবা, তুমি আশীর্বাদ কোরো।

বাবা: জ্ঞানে-মানে-ধনে অনেক বড় হও–দোয়া করি।

মেয়ে: ধন্যবাদ বাবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button