Bangla

আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখ্যা ও মূলভাব

HSC বাংলা প্রথম পত্রের সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখ্যা এবং মূলভাব নিচে প্রকাশ করা হলো।

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ১ম পত্রের ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি কিশোর কবি নামে পরিচিত সুকান্ত ভট্টাচার্যের ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখ্যা নিচে দেওয়া হলো।

আঠারো বছর বয়স কবিতার মূলভাব

“আঠারো বছর বয়স” কবিতাটি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ছাড়পত্র কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। এ কবিতায় কবি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের এ বয়সটি উত্তেজনার, প্রবল আবেগ ও উচ্ছ্বাসে জীবনের ঝুঁকি নেবার উপযোগী। এ বয়সে অদম্য দুঃসাহসে সকল বাধা-বিপদকে পেরিয়ে যাওয়ার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য প্রস্তুত। এদের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া, আঘাত সংঘাতের মধ্যে রক্ত শপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। পাশাপাশি সমাজ জীবনের নানা বিকার, অসুস্থতা ও সর্বনাশের অভিঘাতে হয়ে উঠতে পারে এরা ভয়ংকর।

কিন্তু এ বয়সের আছে সমস্ত দুর্যোগ আর দুর্বিপাক মোকাবিলা করার অদম্য প্রাণশক্তি। ফলে তারুণ্য ও যৌবনশক্তি দুর্বার বেগে এগিয়ে যায় প্রগতির পথে। যৌবনের উদ্দীপনা, সাহসিকতা, দুর্বার গতি, নতুন জীবন রচনা স্বপ্ন এবং কল্যাণব্রত- এসব বৈশিষ্ট্যের জন্য কবি প্রত্যাশা করেছেন নানা সমস্যাপীড়িত দেশে তারুণ্য ও যৌবন শক্তি যেন জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়।

আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখ্যা

‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে মানবজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বয়ঃসন্ধিকালের-বৈশিষ্ট্যগুলোকে তুলে ধরেছেন।

কবির মতে, আঠারো বছর বয়স দুঃসহ উত্তেজনা নিয়ে আত্ম-অহংকারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। এ বয়স অনায়াসেই দুঃসাহসী হয়ে ওঠে এ বয়সের কোনো ভয় নেই। পদাঘাতে সব বাধা ভেঙে ফেলতে চায়। এ বয়সে কেউ মাথা নত করে না। এ বয়স কখনো কাঁদতে জানে না। বরং রক্ত দিতে জানে। কেননা রক্ত দেওয়াকে এ বয়স পুণ্য বলে মনে করে। এ বয়স গতিশীল। বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো দ্রুত সামনে চলাই তার কাজ। এ বয়স দেশ ও জাতির জন্য প্রাণও দিতে জানে। জীবনপণ করে এ বয়স মিছিলে নামতে জানে। এ বয়সের তাজা প্রাণে থাকে অসহ্য যন্ত্রণা।

এ বয়সে তীব্র ও প্রখরভাবে প্রাণ খুব সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। এ বয়সে কানে আসে অনেক মন্ত্রণা । যাতে ভালো-মন্দ দুটোই থাকে। এ বয়স দুর্বার গতিসম্পন্ন। ঝড়ের গতিতে দুরন্ত বেগে পথে-প্রান্তরে ছুটে বেড়ায়। এ বয়সে অসংখ্য দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয়। তাই এ সময় সঠিক পথে চলা খুবই কষ্টকর হয়ে ওঠে। আর এ সময় যদি কেউ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে সঠিক পথ থেকে ছিটকে পড়ে, তবে নানা প্রতিকূলতার আঘাতে প্রাণ ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। এ বয়সে আঘাতের পর আঘাত আসে। কখনো কখনো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে এ বয়স বিষাদে কালো হয়ে যায়। বেদনায় থরোথরো কাঁপে।

তারপরও এ বয়স বিজয়মাল্য ছিনিয়ে আনে। চারদিকে ঘোষিত হয় তার জয়ধ্বনি। দুর্যোগ আর ঝড় যতই আসুক তাতে এ বয়স কখনো থামে না। সবকিছু মোকাবিলা করে এ বয়স টিকে থাকে। বিপদের মুখে এ বয়স সব সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এ বয়স থেমে থাকে না। সব সময় নতুন কিছু করে। তাই এ বয়সের কোনো দ্বিধা বা সংশয় নেই। এ কারণেই জাতীয় মুক্তি ও অগ্রগতির প্রয়োজনে কবি এ দেশের বুকে আঠারো নেমে আসার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।

আঠারো বছর বয়স মানবজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ পালাবদলের সময়। এ বয়সেই মানুষ কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে। বয়সের এ সন্ধিক্ষণে নিজের ভেতর এক ধরনের আত্মনির্ভরতার শক্তি তৈরি হয় বলে পরনির্ভরশীলতা তাদের কাছে অসহ্য মনে হয়। অন্যের কাঁধে থেকে নিজের কাঁধে দায়িত্ব নিতে তৎপর হয়ে ওঠে তারা। অনের ওপর নির্ভরতা পরিহার করে তারা তখন নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেদের মতো করে সব কাজ করতে চায়। এটাকে এক ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ঔদ্ধত্য বলে মনে হলেও এটাই স্বাভাবিক। মানবজীবনের বয়ঃসন্ধিকালের এই কঠিন সত্যটিকেই কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় অত্যন্ত চমৎকারভাবে মূর্ত করে তুলেছেন।

আরো দেখুনঃ সোনার তরী কবিতার ব্যাখ্যা ও মূলভাব

কবিতার নামকরণ

অন্তর্নিহিত বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটির নামকরণ করা হয়েছে । কবিতাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মানুষের আত্মনির্ভরশীলতার উন্মেষকাল আঠারো বছর বয়সের বৈশিষ্ট্যকেই তুলে ধরা হয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় তাই কবিতার ‘আঠারো বছর বয়স’ নামকরণটি অত্যন্ত সার্থক ও সংগত হয়েছে।

ছন্দ: কবিতাটি ৬ মাত্রার মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। প্রতি চরণের মাত্রা সংখ্যা: ১৪। মাত্রাবিন্যাস: ৬+৬+2।
রূপশ্রেণি: ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় তরুণদের কর্মোদ্দীপনা ও প্রাণশক্তির পরিচয় বিধৃত হয়েছে।

আঠারো বছর বয়স কবিতার অনুষঙ্গ

আঠারো বছর বয়স: আঠারো বছর বয়সে একজন মানুষ কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে। কবি এ কবিতায় নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে এ বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, এ বয়স প্রবল আবেগ, উচ্ছ্বাস ও উত্তেজনার। এ বয়স অদম্য দুঃসাহসে সকল বাধা অতিক্রম করতে পারে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য এ বয়সের তরুণরা সব সময় প্রস্তুত থাকে । আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া এ বয়সের প্রধান ধর্ম।

তারুণ্যের জীবনীশক্তি: আঠারো বছর বয়সের তরুণদের জীবনীশক্তির প্রখরতা বোঝাতে কবি বাষ্প ও স্টিমারের উপমা ব্যবহার করেছেন। এ বয়সের তরুণদের প্রাণশক্তি থাকে তীব্র আর প্রখর। তাই সমস্ত দুর্যোগ ও দুর্বিপাক মোকাবিলা করতে তারা অগ্রবর্তী। এসব বৈশিষ্ট্যের জন্য কবি প্রত্যাশা করেছেন, নানা সমস্যাপীড়িত দেশে তারুণ্যের যৌবনশক্তি যেন জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button