Chemistry

কোয়ান্টাম সংখ্যা কাকে বলে? কোয়ান্টাম সংখ্যার বিস্তারিত আলোচনা

এখানে নিচে কোয়ান্টাম সংখ্যা কাকে বলে এবং কোয়ান্টাম সংখ্যার প্রকারভেদ সহ কোয়ান্টাম সংখ্যার বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

স্রোডিঞ্জার প্রদত্ত ত্রিমাত্রিক দ্বিঘাত তরঙ্গ সমীকরণভিত্তিক পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চতুর্দিকে ইলেকট্রন মেঘের অবস্থান সম্পর্কীয় গণনার ফলাফল হলো কোয়ান্টাম বলবিদ্যা পরমাণু মডেলের পরিপূর্ণতা লাভের মূল চাবিকাঠি। এ ত্রিমাত্রিক তরঙ্গ গতীয় সমীকরণের গাণিতিক সমাধান থেকে প্রাপ্ত তিনটি রাশি বা প্যারামিটার দ্বারা ইলেকট্রনের সম্ভাব্য সর্বাধিক (৯০-৯৫%) বা অরবিটালের শক্তিমাত্রা এবং এর ত্রিমাত্রিক আকার-আকৃতিকে প্রকাশ করা যায়। ইলেকট্রনের অরবিটাল সম্পর্কীয় এ তিনটি সম্পর্ক যুক্ত রাশি বা প্যারামিটারকে অরবিটালের কোয়ান্টাম সংখ্যা বলা হয়।

কোয়ান্টাম সংখ্যা কাকে বলে?

কোয়ান্টাম বলবিদ্যা অনুসারে পরমাণুর ইলেকট্রনের কক্ষপথ বা শক্তিস্তরের আকার, কক্ষপথের আকৃতি ও কক্ষপথের ত্রিমাত্রিক দিক বিন্যাস নির্দেশক পরস্পর সম্পর্কযুক্ত তিনটি রাশি রয়েছে। এছাড়া পারমাণবিক বর্ণালির সূক্ষ্ম গঠন বিশ্লেষণের জন্য ইলেকট্রনের অক্ষ বরাবর ঘুর্ণন প্রকাশক চতুর্থ রাশি আছে। এ চারটি রাশিকে কোয়ান্টাম সংখ্যা বলা হয়।

কোয়ান্টাম সংখ্যা কত প্রকার ও কী কী?

কোয়ান্টাম সংখ্যা মোট চার প্রকার। এ চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যার নির্দিষ্ট মান দ্বারা একটি পরমাণুতে প্রতিটি আবর্তনশীল ইলেকট্রনের শক্তি ও অবস্থানের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা দেয়া যায়। এ চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যার নাম হলোঃ-

১। প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা, n
২। অ্যাজিমুথাল বা সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা, l
৩। চুম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা, m
৪। ঘুর্ণন কোয়ান্টাম সংখ্যা, s

১। প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা, n : বোর পরমাণু মডেল অনুসারে পরমাণুর ইলেকট্রনসমূহ নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট বৃত্তাকারে অরবিট বা শক্তিস্তরে আবর্তন করে। প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা অরবিট বা শক্তিস্তরের আকার প্রকাশ করে। বিজ্ঞানী বোর শক্তিস্তর সম্পর্কীয় প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা (n) এর ধারণা প্রস্তাব করেন। প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা n এর মান 1, 2, 3, 4 প্রভৃতি পূর্ণ সংখ্যা।

২। অ্যাজিমুথাল বা সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা, l : পরমাণুতে ইলেকট্রন আবর্তনের জন্য প্রতিটি প্রধান শক্তিস্তর নির্দিষ্ট সংখ্যক উপশক্তিস্তরে বিভক্ত থাকে। একটি ইলেকট্রন প্রধান শক্তিস্তরের যে উপস্তরে রয়েছে তা প্রকাশের জন্য সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা ব্যবহৃত হয়। এইকে অরবিটাল কোয়ান্টাম সংখ্যা ও সমারফিল্ড কোয়ান্টাম সংখ্যা বলা হয়। বিজ্ঞানী সমারফিল্ড সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা সম্বন্ধে সর্বপ্রথম ব্যাখ্যা দেন। সরকারী কোয়ান্টাম সংখ্যাকে l দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

৩। চুম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা, m : পরমাণুর কেন্দ্রে ধনাত্মক চার্জযুক্ত নিউক্লিয়াস ও কক্ষপথে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন থাকার কারণে পরমাণুর ভেতরে একটি বিদ্যুৎ ক্ষেত্র এবং এর প্রভাবে চুম্বকক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। এ চুম্বকক্ষেত্রের প্রভাবে ইলেকট্রনের বিভিন্ন অরবিটালের ত্রিমাত্রিক দিক স্থিতি বা অরিয়েন্টেশন ঘটে। বিজ্ঞানী জিম্যান চুম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যার ধারণা দেন। চুম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যাকে m দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

৪। ঘুর্ণন কোয়ান্টাম সংখ্যা, s : প্রতিটি ইলেকট্রনের সর্বদা নিজ অক্ষের চারদিকে ঘুর্ণন বা স্পিনগতি থাকে। অক্ষ বরাবর ঘুরতে ঘুরতে প্রতিটি ইলেকট্রন নিজের কক্ষপথে আবর্তন করে থাকে। ঘূর্ণন বা স্পিন গতির কারণে প্রতিটি ইলেকট্রন একটি অতি ক্ষুদ্র চুম্বকরূপে মৃদু চৌম্বকক্ষেত্র সৃষ্টি করে। ইলেকট্রনের স্পিন বর্ণনার জন্য যে কোয়ান্টাম সংখ্যা ব্যবহৃত হয়, একে স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা বলে। স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যাকে s দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যার সাথে পারমাণবিক বর্ণালি রেখার সম্পর্ক

স্রোডিংজারের তরঙ্গ সমীকরণের গাণিতিক ব্যাখ্যাভিত্তিক অরবিটাল কোয়ান্টাম সংখ্যা n, l, m এর পারস্পারিক সম্পর্কভিত্তিক মান থেকে প্রতিটি শক্তিস্তরে সর্বাধিক অরবিটাল সংখ্যা গণনা ও পাউলির বর্জন নীতি সমন্বয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত ইলেকট্রন বিন্যাস দ্বারা পারমাণবিক বর্ণালি রেখার সুন্দর ব্যাখ্যা মিলে। তা নিচে দেওয়া হলো-

১। বোর মডেল মতে, উদ্দীপিত ইলেকট্রন উচ্চ শক্তিস্তর থেকে নিম্ন শক্তিস্তরে লাফিয়ে ফেরার সময় বিকীর্ণ শক্তি থেকে রেখা বর্ণালি সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে পরমাণুর শক্তিস্তর নির্দেশক প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা জড়িত।

২। আবার উদ্দীপিত ইলেকট্রন থেকে বিকীর্ণ শক্তিকে স্পেকটোমিটার বা বর্ণালি বীক্ষণ যন্ত্রে বিশ্লেষণ করলে পূর্বের রেখা বর্ণালিটি বিশ্লেষিত হয়ে ক্ষেত্রবিশেষ দুই বা ততোধিক সূক্ষ্ম রেখা বর্ণালিতে পরিণত হয়; যা পরমাণুর উপশক্তিস্তর সংশ্লিষ্ট s, p, d অরবিটাল বিন্যাসকে বোঝায়।

৩। আবার ঐ বিকীর্ণ শক্তিকে স্পেকটোমিটার দ্বারা সূক্ষ্ম রেখায় বিশ্লেষণের পর চুম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা হলে তখন পূর্বের উপশক্তিস্তর সংশ্লিষ্ট সূক্ষ্ম রেখা বর্ণালিগুলো বিজোর সংখ্যা বিভাজিত হয়ে সূক্ষ্মতর রেখা বর্ণালি সৃষ্টি করে, যা চুম্বক কোয়ান্টাম সংখ্যা এর সম্ভাব্য মান সংশ্লিষ্ট মোট ত্রিমাত্রিক অরবিটাল সংখ্যাকে বোঝায়।

৪। এভাবে সৃষ্ট অরবিটাল সংশ্লিষ্ট সূক্ষতর রেখা বর্ণালিগুলোকে অধিকতর শক্তিশালী চুম্বকক্ষেত্র দ্বারা বিশ্লেষিত করা হলে তখন প্রতিটি সূক্ষতর রেখা দুটি সমঅংশে পৃথক হয়ে পড়ে; যা ইলেকট্রনের স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা সংশ্লিষ্ট দুটি চুম্বকধর্মী ইলেকট্রনের বিপরীত স্পিনকে বোঝায়।

চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যার তাৎপর্য

কোয়ান্টাম বলবিদ্যা পরমাণু মডেল অনুসারে পরমাণুতে নির্দিষ্ট শক্তিস্তর বা অরবিটে আবর্তনশীল প্রতিটি ইলেকট্রনের শক্তি, অবস্থান ও বৈশিষ্ঠ্য প্রকাশের জন্য পরস্পর সম্পর্কযুক্ত চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যার নির্দিষ্ট মান প্রয়োজন হয়। যেমন-

১। প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যার প্রতীক ও মানঃ প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যার প্রতীক হলো n এনং n = 1, 2, 3, 4, 5, 6, 7 পর্যন্ত মান ধরা হয়।

২। সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যার প্রতীক ও মানঃ সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যার প্রতীক হলো l এবং l = 0 থেকে (n-1) পর্যন্ত ধরা হয়।

৩। চুম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যার প্রতীক ও মানঃ চুম্বকীয় সংখ্যার প্রতীক হলো m এবং m = + l থেকে শূন্যসহ – l ধরা হয়।

৪। স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যার প্রতীক ও মানঃ স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যার প্রতীক হলো s এবং প্রতিটি m এর মানের জন্য s = + 1/2 ও – 1/2 দুটো করে মান ধরা হয়। এদের বিপরীত স্পিন বোঝাতে ঊর্ধ্বমুখী ও নিম্নমুখী তীর ব্যবহৃত হয়।

এখানে বিজ্ঞান বিভাগের রসায়নের কোয়ান্টাম সংখ্যার সংজ্ঞা, প্রকারভেদ এবং কোয়ান্টাম সংখ্যা সম্পর্ক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আরো দেখুনঃ গুণগত রসায়ন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button