সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা
এখানে নিচে বাংলা ২য় পত্রের লিখিত অংশের সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি নিয়ে দুই বন্ধুর সংলাপ বা সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি নিয়ে সংলাপ দেওয়া হলো।
বর্তমান সময়ে একটি আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক হলো সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রায়ই এ সম্পর্কে সংলাপ রচনা এসে থাকে। তাই সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ বা কথোপকথন নিচে দেওয়া হলো।
সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি নিয়ে সংলাপ
আদৃতা: অপসংস্কৃতি বলে চ্যাচানো আমাদের একটা ম্যানিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাফসান: ‘অপ’ এর অর্থ খারাপ। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে খারাপ কিছু দেখলে অপসংস্কৃতি বলা তো অন্যায় নয়, দোষেরও নয়।
আদৃতা: দ্যাখ, রাফসান, আমরা বড় বেশি রক্ষণশীল। প্রচলিত পুরোনো পথে হাঁটতে আমরা অভ্যস্ত। তার একটু ব্যতিক্রম হলেই বা তাতে একটু নতুনত্ব এলেই আমাদের গেল গেল রব। হিন্দি সিনেমার গান, পশ্চিমা রক-পপের অনুপ্রবেশ মাত্রকেই আমরা সর্বনাশের কারণ বলে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকি। অপসংস্কৃতি বলে চেঁচিয়ে দেশ মাথায় করি।
রাফসান: ব্যাপারটা ওভাবে ভাবছিস কেন?
আদৃতা: কীভাবে ভাবব বল।
রাফসান: আগে সংস্কৃতি-অপসংস্কৃতির বোধটা পরিষ্কার করে নিই।
আদৃতা: তাই হোক।
রাফসান: শিক্ষাদীক্ষা, গান, নাচ, নাটক এসবের একটা সাধারণ নাম হলো সংস্কৃতি। একেই ইংরেজিতে বলা হয় : কালচার। কেউ বা কালচারের প্রতিশব্দ কৃষ্টি বলেন।
আদৃতা: বুঝলাম। তারপর?
রাফসান: এখন দেখতে হবে সংস্কৃতির ধারক ও বাহক কী?
আদৃতা: সংবাদপত্র, বই, সিনেমা, টেলিভিশন, বেতার, ভিডিও, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি।
রাফসান: এগুলোই হলো এক অর্থে সংস্কৃতির উপকরণ। এদের ব্যবহারের ও পরিবেশনের দায়-দায়িত্ব অপরিসীম। এরাই মানুষকে শিক্ষা দেয়, মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তোলে, দেশাত্মবোধের উদ্বোধন ঘটায়, পারস্পরিক মমত্ব-সহানুভূতি-সহমর্মিতার বোধ জাগায়, প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসার বিকাশ ঘটায়।
আদৃতা: বুঝেছি, একেই বলে সুস্থ সংস্কৃতি।
রাফসান: ঠিক ধরেছিস। বিপরীত হলেই অপসংস্কৃতি। যা মানুষকে বিকৃত রুচির পথে ঠেলে দেয়, অবক্ষয়ের পথে চালিত করে, মানুষের মহৎ ভাবনা-চিন্তার অবলোপ ঘটায়, মানুষের প্রতি মানুষের দায়-দায়িত্ব কর্তব্যবোধ ধ্বংস করে, ঘৃণায় বিদ্বেষে জিঘাংসায় অমানুষ করে তোলে, তাকে মানুষের শুভবোধের পরিচয় বলবি? তাকে সংস্কৃতি, না অপসংস্কৃতি বলবি?
আদৃতা: তা না হয় হলো। কিন্তু পশ্চিমা ঝড়ের তাণ্ডব ঘরের যাবতীয় জিনিসপত্র লন্ডভন্ড করে দেয় বলে কি সারা বছর ঘরের দরজা-জানালা রুদ্ধই থাকবে? বাইরের আলো হাওয়ার অবাধ চলাচলের পথ না থাকলে ঘরের মানুষটা বাঁচবে কী করে?
রাফসান: না, প্রবেশের সুযোগ অবশ্যই থাকবে। তবে অবাঞ্ছিতকে বর্জন করে কেবল বাঞ্ছিতটুকু নেবার যথার্থ গ্রহণ-ক্ষমতা ও দৃঢ়তা থাকা দরকার। ‘দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে’- এই উদার সমন্বয়ী মনোভাবের মধ্য দিয়েই তে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি সব কিছুরই উৎকর্ষ সম্ভব।
আদৃতা: তাহলে বল, বাধাটা কেবল সুস্থতার অন্তরায় যেটুকু।
রাফসান: অবশ্যই।