Bangla

অপরিচিতা গল্পের ব্যাখ্যা ও মূলভাব

HSC বাংলা প্রথম পত্রের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত অপরিচিতা গল্পের ব্যাখ্যা এবং মূলভাব নিচে তুলে ধরা হলো

উচ্চমাধ্যমিক একাদশ-দ্বাদশ শ্রেনীর বাংলা প্রথম পত্রের গদ্যাংশের একটি গল্পের নাম অপরিচিতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অপরিচিতা’ ছোটগল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত মাসিক ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার ১৩২১ বঙ্গাব্দের (১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দ) কার্তিক সংখ্যায়। এটি প্রথম গ্রন্থভুক্ত হয় রবীন্দ্রগল্পের সংকলন ‘গল্পসপ্তক’-এ, পরে ‘গল্পগুচ্ছ’ তৃতীয় খণ্ডে (১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে)।

অপরিচিতা গল্পের মূলভাব

“অপরিচিতা” প্রথম প্রকাশিত হয় প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত মাসিক ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার ১৩২১ বঙ্গাব্দের (১৯১৪) কার্তিক সংখ্যায়। এটি প্রথম গ্রন্থভুক্ত হয় রবীন্দ্রগল্পের সংকলন ‘গল্পসপ্তক’-এ এবং পরে, ‘গল্পগুচ্ছ’ তৃতীয় খণ্ডে (১৯২৭)। “অপরিচিতা” গল্পে অপরিচিতা বিশেষণের আড়ালে যে বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী নারীর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে, তার নাম কল্যাণী । অমানবিক যৌতুক প্রথার নির্মম বলি হয়েছে এমন নারীদের গল্প ইতঃপূর্বে রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু এই গল্পেই প্রথম যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রতিরোধের কথকতা শোনালেন তিনি। এ গল্পে পিতা শম্ভুনাথ সেন এবং কন্যা কল্যাণীর স্বতন্ত্রবীক্ষা ও আচরণে সমাজে গেড়ে বসা ঘৃণ্য যৌতুকপ্রথা প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে। পিতার বলিষ্ঠ প্রতিরোধ এবং কন্যা কল্যাণীর দেশচেতনায় ঋদ্ধ ব্যক্তিত্বের জাগরণ ও তার অভিব্যক্তিতে গল্পটি সার্থক।

“অপরিচিতা” উত্তম পুরুষের জবানিতে লেখা গল্প। গল্পের কথক অনুপম বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের যুদ্ধসংলগ্ন সময়ের সেই বাঙালি যুবক, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর উপাধি অর্জন করেও ব্যক্তিত্বরহিত, পরিবারতন্ত্রের কাছে অসহায় পুতুলমাত্র। তাকে দেখলে আজো মনে হয়, সে যেন মায়ের কোলসংলগ্ন শিশুমাত্র। তারই বিয়ে উপলক্ষ্যে যৌতুক নিয়ে নারীর চরম অবমাননাকালে শম্ভুনাথ সেনের কন্যা-সম্প্রদানে অসম্মতি গল্পটির শীর্ষ মুহূর্ত। অনুপম নিজের গল্প বলতে গিয়ে ব্যাঙ্গার্থে জানিয়ে দিয়েছে সেই অঘটন সংঘটনের কথাটি। বিয়ের লগ্ন যখন প্রস্তুত তখন কন্যার লগ্নভ্রষ্ট হওয়ার লৌকিকতাকে অগ্রাহ্য করে শম্ভুনাথ সেনের নির্বিকার অথচ বলিষ্ঠ প্রত্যাখ্যান নতুন এক সময়ের আশু আবির্ভাবকেই সংকেতবহ করে তুলেছে। কর্মীর ভূমিকায় বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের জাগরণের মধ্য দিয়ে গল্পের শেষাংশে কল্যাণীর শুচিশুভ্র আত্মপ্রকাশও ভবিষ্যতের নতুন নারীর আগমনীর ইঙ্গিতে পরিসমাপ্ত।

‘অপরিচিতা’ মনস্তাপে ভেঙেপড়া এক ব্যক্তিত্বহীন যুবকের স্বীকারোক্তির গল্প, তার পাপস্খালনের অকপট কথামালা। অনুপমের আত্মবিবৃতির সূত্র ধরেই গল্পের নারী কল্যাণী অসামান্যা হয়ে উঠেছে। গল্পটিতে পুরুষতন্ত্রের অমানবিকতার স্ফুরণ যেমন ঘটেছে, তেমনি একই সঙ্গে পুরুষের ভাষ্যে নারীর প্রশস্তিও কীর্তিত হয়েছে।

অপরিচিতা গল্পের ব্যাখ্যা

‘অপরিচিতা’ বাগদত্তার প্রতি মনস্তাপে ভেঙে পড়া এক ব্যক্তিত্বহীন যুবকের প্রেমানুভূতির গল্প তার অনুশোচনাবোধের অকপট কথামালা। এই গল্পে অপরিচিতা বিশেষণের আড়ালে রয়েছে এক বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী নারী, যে সমাজে জেঁকে বসা ঘৃণ্য যৌতুকপ্রথার বিরোধিতা করেছে।

গল্পের নায়ক অনুপমের জীবন সম্পর্কে সহজ স্বীকারোক্তি দিয়ে এ গল্প শুরু হয়। অনুপম দেখতে সুশ্রী ছিল। কিন্তু গুণহীনতার কারণে শিক্ষকরা তাকে শিমুল ফুল ও মাকাল ফলের সাথে তুলনা করতেন। পিতার মৃত্যুর পর মায়ের স্নেহেই সে বড়ো হয়। মায়ের অনুগত সন্তান বলেই কখনো মাতৃ-আজ্ঞার বিপরীতে যাওয়ার সাহস সে করেনি। কিন্তু তার আসল অভিভাবক তার মামা, যিনি অনুপমদের সংসারের সবকিছুর ভার নিজ কাঁধে নিয়ে নিয়েছেন।

অনুপমের বন্ধু হরিশ কানপুরে কাজ করত। ছুটিতে কলকাতা এসে সেই প্রথম বিয়ের প্রস্তাবটা দেয়। কল্যাণী নামের মেয়েটির চেহারা ও গুণের কথা শোনার পর থেকে অনুপমের শরীর মন আলো-ছায়া বুনতে লাগল। কল্যাণীকে নিয়ে ভাবনার যেন শেষ নেই অনুপমের। এদিকে অনুপমের মামা চাইতেন, তার ভাগ্নের বউ হয়ে এমন ঘরের মেয়ে আসবে, যে মাথা হেঁট করে থাকবে। মেয়ের বাবা হবেন এমন মানসিকতার, যিনি টাকা না থাকলেও টাকা দিতে পিছপা হবেন না। হরিশের সুপারিশে বিয়ের দিন-তারিখ, দেনা-পাওনা সব পাকাপাকি হয়ে গেল। কনের বাবা শম্ভুনাথ ছিলেন অত্যন্ত ঠান্ডা প্রকৃতির মানুষ, যাঁকে বাইরে থেকে দেখে ভেতরের চিত্রটা বোঝা মুশকিল।

বিয়ের দিন তাঁর পরিবর্তে উকিল বন্ধুই বরপক্ষকে সমাদরে গ্রহণ করেন। কিন্তু যৌতুকের স্বর্ণ নিয়ে অনুপমের মামার বাড়াবাড়ি রকম আচরণে শম্ভুনাথ অপমান বোধ করেন। এখানেও অনুপম কোনো ভূমিকা পালন করে না। মামার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে এ ধরনের অপমান থেকে হবু শ্বশুরকে রক্ষার কোনো চেষ্টাই অনুপম করেনি। এখানেই কাহিনি জটিলাকার ধারণ করে। অপমানিত হয়ে কনের বাবা বিয়ে ভেঙে দেন। বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনুপম। সে হারায় তার মনোরাজ্যের সেই অপরিচিত প্রেয়সীকে।

এভাবে বছরখানেক পার হওয়ার পর অপ্রত্যাশিতভাবে একদিন কল্যাণীর সঙ্গে অনুপমের কানপুরে গিয়ে কল্যাণীকে না চেনা সত্ত্বেও কল্যাণীর প্রাণচঞ্চলতা, প্রতিবাদী মানসিকতা ও হাস্যময়ী শিক্ষয়ত্রীর রূপ তাকে মুগ্ধ করে। ট্রেন থেকে নামার সময় সে জানতে পারে এ সেই কল্যাণী। অনুপমের বোধের পরিবর্তন আসে। পরে অনুপম মা ও মামা উভয়কে উপেক্ষা করে দেখা যায় ট্রেনে। শম্ভুনাথ বাবুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। শম্ভুনাথ বাবু অনুপমের এ পরিবর্তনে খুশি হয়ে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু কল্যাণী ততদিনে নারীশিক্ষার সুমহান ব্রত গ্রহণ করে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবু অনুপম আশা ছাড়ে না। কল্যাণীর আশপাশে থেকে তাকে প্রতিনিয়ত দেখেই সে খুশি।

অনুপমের একটি উক্তি এখানে তুলে ধরা হলো: “তাই বৎসরের পর বৎসর যায় আমি এখানেই আছি। দেখা হয়, সেই কণ্ঠ শুনি, যখন সুবিধা পাই কিছু তার কাজ করিয়া দিই— আর মন বলে এই তো জায়গা পাইয়াছি। ওগো অপরিচিতা, তোমার পরিচয়ের শেষ হইল না, শেষ হইবে না।”

‘অপরিচিতা’ ছোটগল্পে এক বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী নারীর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। অমানবিক, ঘৃণ্য যৌতুকপ্রথার বিরুদ্ধে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রতিরোধের কথামালায় সমৃদ্ধ এই গল্পটি। ‘অপরিচিতা’ উত্তম পুরুষের জবানিতে লেখা একটি গল্প। গল্পের কথক অনুপম বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের যুদ্ধসংলগ্ন সময়ের সেই বাঙালি যুবক, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেও ব্যক্তিত্ব রহিত, পরিবারতন্ত্রের কাছে অসহায় পুতুলমাত্র। গল্পটিতে পুরুষতন্ত্রের অমানবিকতার স্ফূরণ যেমন ঘটেছে, তেমনি পুরুষের ভাষ্যে নারীর প্রশস্তিও কীর্তিত হয়েছে।

আরো দেখুনঃ

অপরিচিতা গল্পের নামকরণ

‘অপরিচিতা’ ছোটগল্পের নামকরণ নির্ধারিত হয়েছে এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের ওপর ভিত্তি করে। এ গল্পে অপরিচিত মানসীর প্রতি প্রেমময় হৃদয়ের ব্যাকুলতা মূর্তরূপ পেয়েছে। গল্পের নায়িকা কল্যাণী গল্পজুড়ে নায়ক অনুপমের কাছে অপরিচিতই রয়ে যায়। অনুপমের একটি উক্তি দ্বারা আরও স্পষ্ট হয়, যখন সে বলে— ‘ওগো অপরিচিতা, তোমার পরিচয়ের শেষ হইল না, শেষ হইবে না; কিন্তু ভাগ্য আমার ভালো এই তো জায়গা পাইয়াছি। অনুপমের এমন উপলব্ধির কারণ হলো শেষ পর্যন্ত সে কল্যাণীকে জয় করতে পারেনি। সেই বিয়ের আসর হতে উঠে চলে আসা, আর পরবর্তী সময়ে কল্যাণীর বিয়ে না করার প্রতিজ্ঞার ফলে কল্যাণী অনুপমের কাছে অধরা থেকে যায়। তাই মূলবক্তব্যের এই অন্তর্নিহিত তাৎপর্যকেই লেখক ‘অপরিচিতা’ গল্পের নামকরণের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

উৎস

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অপরিচিতা’ ছোটগল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত মাসিক ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার ১৩২১ বঙ্গাব্দের (১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দ) কার্তিক সংখ্যায়। এটি প্রথম গ্রন্থভুক্ত হয় রবীন্দ্রগল্পের সংকলন ‘গল্পসপ্তক’-এ, পরে ‘গল্পগুচ্ছ’ তৃতীয় খণ্ডে (১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে)।

রূপশ্রেণি: ‘অপরিচিতা’ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সার্থক ছোটগল্প। এ গল্পের প্লট, সূচনা, পরিণতি সবকিছুই ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করেছে।

ভাষারীতি: ‘অপরিচিতা’ উত্তম পুরুষের জবানিতে সাধু ভাষায় লিখিত চমৎকার এক গদ্যশৈলীর উদাহরণ। লেখক অত্যন্ত সরল ও সাবলীল ভাষায় কাহিনিটি উপস্থাপন করেছেন; যা তাঁর শিল্পকুশলতার সাক্ষ্য বহন করে।

অপরিচিতা গল্পের প্রসঙ্গ পরিচয়

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত অপরিচিতা গল্পের বা গদ্যের গুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ পরিচয় গুলো নিচে দেওয়া হলো।

যৌতুকের কাছে মানবিকতাবোধের পরাজয়: যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি। এর কারণে সমাজে শৃঙ্খলা ও শান্তি বিনষ্ট হয়। এই কুপ্রথার কারণে পারিবারিক অশান্তি, এমনকি আত্মহননের ঘটনা পর্যন্ত ঘটতে দেখা যায়। স্বল্প আয়ের মানুষেরা অনেক সময় এ দাবি পূরণে ব্যর্থ হওয়ার কারণে তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়; এতে মানবিকতা বিপর্যস্ত হয়। ‘অপরিচিতা’ গল্পে এই যৌতুকের কাছে মানবিকতাবোধের পরাজয় প্রকাশ পেয়েছে। অনুপম ও কল্যাণীর বিয়ের দিনে অনুপমের মামার হীনমানসিকতা কল্যাণীর বাবাকে আঘাত করেছে। নিজ অহংবোধ ও লোভের কারণে কল্যাণীর গা থেকে গহনা খুলে তা যাচাই করতেও দ্বিধা করেননি অনুপমের মামা।

নারীর আত্মশক্তিতে বলীয়ান হওয়া: পৃথিবীর মোট জনশক্তির অর্ধেক নারী। তাই তাদের দমিয়ে রেখে কোনো জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। ঘরের কোণে বন্দি না থেকে নারীরা আজ পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকল কাজের অংশীদার হয়ে উঠছে। নিজের স্বাতন্ত্র্য ও বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছে দৃঢ় পদক্ষেপে। ‘অপরিচিতা’ গল্পের নায়িকা কল্যাণী একজন দৃঢ়চেতা ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারী। বিয়ের আসরে বিয়ে ভেঙে গেলেও সে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েনি। বরং সে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে দেশের কল্যাণে, নারীদের উন্নয়নে সমাজসেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে। তৎকালীন সমাজ বাস্তবতার প্রতিকূল পরিবেশে ছিল এক সাহসী পদক্ষেপ। গল্পের শেষাংশে কল্যাণীর বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের জাগরণ ও শুচিশুভ্র আত্মপ্রকাশ দেখা যায়, যা ভবিষ্যতের নতুন নারীর আগমনী ইঙ্গিতে সমাপ্ত।

সুশিক্ষার মর্যাদা ও ব্যক্তিত্ববোধের দৃঢ়তা: আলোচ্য গল্পটিতে সুশিক্ষার মর্যাদা যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি ব্যক্তিত্ববোধের দৃঢ়তার দিকটিও আমরা দেখতে পাই। এখানে অনুপম এমএ পাস করা উচ্চশিক্ষিত যুবক হলেও তাকে সুশিক্ষিত বলা যায় না। কারণ গল্পের শুরুতে আমরা তাকে ব্যক্তিত্বহীনরূপে দেখি। অন্যদিকে কল্যাণী ও তার বাবার মধ্যে আমরা যে দৃঢ়তার পরিচয় পাই তা তাদের সুশিক্ষার পরিচয় বহন করে । কল্যাণীর বাবা শম্ভুনাথ সেন ও কল্যাণীর স্বতন্ত্র ভাবনা-চিন্তা ও আচরণে সমাজে গেড়ে বসা যৌতুকপ্রথা অনুচ্চ অথচ তীব্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে কল্যাণীর দেশমাতৃকার প্রতি আত্মনিবেদন তার সুশিক্ষা ও উন্নত ব্যক্তিত্ববোধের পরিচায়ক।

অচেনা মানবীর প্রতি প্রেমিক-হৃদয়ের দুর্বার আকর্ষণের স্বরূপ: ‘অপরিচিতা’ গল্পে কল্যাণীর সাথে অনুপমের বিয়ে ঠিক হয়। কিন্তু সামাজিক কুপ্রথা যৌতুকের কারণে তাদের বিয়ে ভেঙে গেলেও অনুপম তাকে ভুলতে পারেনি। অনুপমের কল্পনার জগতে সর্বত্র বিরাজ করে কল্যাণী। কল্যাণীর রূপ-যৌবন, এমনকি তার মুখের ভাষাও অনুপমের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। কল্যাণীর সঙ্গে দেখা করার জন্য মামার নিষেধ সত্ত্বেও অনুপম কানপুরে যায়।

তৎকালীন সমাজের বিবাহপ্রথা: ব্রিটিশশাসিত সমাজব্যবস্থায় বিবাহপ্রথা ছিল যৌতুকপ্রথার যূপকাষ্ঠে বলি। তখনকার দিনে বিয়ের সময় কন্যা-সম্প্রদানের জন্য যৌতুক প্রদান করার রেওয়াজ প্রচলিত ছিল। এমনকি সম্পূর্ণ টাকা না পেলে বরকে বিয়ের আসরে বসতে দিত না তার পরিবার। সে সময় যৌতুকপ্রথা একটা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছিল। আলোচ্য গল্পে যৌতুকপ্রথার নির্মমতা উন্মোচিত হয়েছে। অনুপমের মামার হীনমানসিকতা ও যৌতুকের প্রতি লোভ তৎকালীন বিবাহপ্রথা সম্পর্কে ধারণা দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button